Advertisement
১৩ জুন ২০২৪

প্রিয়-স্মরণে ঝাঁপি খুলল যন্ত্রণার

মহাজাতি সদনের দো’তলার ঘরের দেওয়াল যে তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের পথে বহু লড়াইয়ের সাক্ষী, নিজেই সে কথা লিখে গিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।

প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

প্রায় ৯ বছর তিনি ছিলেন না সক্রিয় রাজনীতিতে। এমন দীর্ঘ অনুপস্থিতির পরেও তাঁর স্মরণে এক সুর হলেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, বিজেপি— সব দলের প্রতিনিধির গলায় শোনা গেল তাঁর দেখানো পথে কদর্যতাহীন রাজনীতির কথা।

মহাজাতি সদনের দো’তলার ঘরের দেওয়াল যে তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের পথে বহু লড়াইয়ের সাক্ষী, নিজেই সে কথা লিখে গিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। সেই মহাজাতি সদনেই রবিবার সকালে প্রদেশ কংগ্রেসের আয়োজনে স্মরণসভার আসরে প্রিয়-জায়া দীপা দাশমুন্সি তাই বলেছেন, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস আর মহাজাতি সদন, এই দু’টো ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল ওঁর জীবনের সঙ্গে।’’ স্মৃতিবিজড়িত সেই সদনে দাঁড়িয়েই মনের কথা খুলে বলেছেন তাঁর পুরনো সহযোদ্ধারা।

আরও পড়ুন: কাটা হাতেই জুতোয় ফোঁড়

তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় যেমন। রাজনীতিতে তাঁর উঠে আসা যে প্রয়াত নেতার হাত ধরেই, অকপটে তা স্বীকার করে এ দিন সৌগতবাবুর মন্তব্য, ‘‘প্রিয়দা বলেছিল, দল ছাড়িস না। যা দরকার হবে, আমি দেখে নেব। সেই কথা রাখতে পারিনি প্রিয়দা! এই যন্ত্রণা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।’’ তৃণমূলেরই আর এক বর্ষীয়ান নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রায় রুদ্ধকণ্ঠে জানিয়েছেন, পার্টি-পরিবার সর্বত্র একাকার হয়ে ছিলেন প্রিয়বাবুর সঙ্গে। প্রিয়বাবুর পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিজের হাতে কাজ করেছেন। সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘যত দিন প্রিয়রঞ্জন সক্রিয় ছিলেন, ‘দক্ষিণী বার্তা’র (প্রিয়ের সম্পাদিত পত্রিকা) অনুষ্ঠানে যেতে কখনও ভয় পাইনি! দল আলাদা হয়ে গেলেও সেই টানটা ছিল।’’ সিপিএমের বিমান বসু, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী বা প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়েরা মনে করিয়েছেন ছাত্র রাজনীতিতে প্রিয়বাবুর ভূমিকা।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের আফশোস, ‘‘বাগ্মিতা ছিল প্রিয়দা’র! এখন বক্তৃতা আছে, বাগ্মিতা নেই।’’ আর দীপার আক্ষেপ, ‘‘প্রিয়দা থাকলে বাংলার রাজনীতির এই অবস্থায় হতো না!’’ সংক্ষিপ্ত কিছু কথায় এ দিন বাবাকে স্মরণ করেছে প্রিয়-পুত্র প্রিয়দীপও।

শানিত বক্তব্যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে জানতেন কিন্তু প্রতিপক্ষ আর শত্রুর মধ্যে বিভাজন রেখেছেন— প্রয়াত নেতার এই গুণের কথা মনে করিয়েই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর আহ্বান, ‘‘এক মঞ্চে সবাই তো এসেছি। আসুন না, প্রিয়দা’র সেই গুণ আয়ত্ত করি। আগামী দিনে বাংলার স্বার্থে রাজনীতি করি। হানাহানি, রক্তারক্তি বন্ধ থাকুক।’’

মঞ্চে থাকলেও বলেননি বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তাঁকে বলতে ডাকা হয়নি নাকি তিনি বললেন না? মান্নানের জবাব, ‘‘এটা আমি বলতে পারব না!’’ আর আমন্ত্রণ পেয়েও উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি— সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE