Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সব অঙ্গীকার পূর্ণ, পঞ্চম বার্ষিকীতে দাবি মমতার

ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের মধ্যেই দাবি করেছিলেন, রাজ্যের জন্য ৯৯% কাজই করা হয়ে গিয়েছে! প্রথম বর্যপূর্তির সময় তাঁর দাবি ছিল, ১০ বছরের কাজ করে দিয়েছেন! এ বার তাঁর সরকারের চার বছর পূর্ণ করে পঞ্চম বার্ষিকীতে পা দেওয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, বাংলার মানুষের প্রতি তাঁর সব অঙ্গীকারই পূরণ করে ফেলেছেন!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০৪:১১
Share: Save:

ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের মধ্যেই দাবি করেছিলেন, রাজ্যের জন্য ৯৯% কাজই করা হয়ে গিয়েছে! প্রথম বর্যপূর্তির সময় তাঁর দাবি ছিল, ১০ বছরের কাজ করে দিয়েছেন! এ বার তাঁর সরকারের চার বছর পূর্ণ করে পঞ্চম বার্ষিকীতে পা দেওয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, বাংলার মানুষের প্রতি তাঁর সব অঙ্গীকারই পূরণ করে ফেলেছেন! যা শুনে স্বভাবতই তির্যক মন্তব্য করতে ছাড়ছেন না বিরোধী নেতারা।

সরকারের চার বছর পার করে আসার ঘটনায় উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী বুধবার ফেসবুকে ঘোষণা করেছেন, ‘আগের সরকারের রেখে যাওয়া বিপুল ঋণের বোঝা, নানা বাধা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছি। বাংলার মানুষের প্রতি আমাদের সব অঙ্গীকার পূরণ করেছি’। তাঁর সরকারের অনেক কাজ জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং অন্য রাজ্যও সেই মডেল অনুসরণ করছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। তাঁদের এই কৃতিত্বের জন্য অবশ্য বাংলার ‘মা-মাটি-মানুষ’কে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু তাঁর এমন দাবির সঙ্গে একেবারেই একমত নন বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশের জেরে এখন সরকারি বিজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া বন্ধ। তাই পঞ্চম বার্ষিকীতে এ বার মমতার সরকারের বিজ্ঞাপনের ঘনঘটা একটু কম। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর যত আগ্রহ শুধু নিজের মুখের ছবি আর মুখনিঃসৃত বাণীর প্রতি! যদি রাজ্যের মানুষের জন্য সব অঙ্গীকার পূরণই হয়ে থাকবে, তা হলে তো তার ফিরিস্তি দিয়ে দিস্তে দিস্তে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা!’’ ক্ষমতায় আসার আগে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তাঁর দলের নির্বাচনী ইস্তাহার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা আর পড়ে দেখেছেন কি না, প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাসঙ্গিক হিসাবে এখনই একটা প্রশ্ন তোলা যায়। সব অঙ্গীকার যদি পূরণ হয়েই থাকে, তা হলে এত দিনেও পুরসভাগুলোকে পুর-নিগম করে তুলতে পারলেন না কেন? কেন ৭টা পুরসভার ভোট নিয়ে টানাটানি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাচ্ছে?’’

একই সুরে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, রাজ্যে টাটারা ফেরেনি। শিল্পও বেহাল। ইনফোসিস যাব যাব করছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। সরকার বেকার ভাতা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাম আমলের দলতন্ত্র থেকে শিক্ষা বা পুলিশ, কোনও দফতরই মুক্ত হয়নি। বরং, দলতন্ত্রের ফাঁস আরও দুঃসহ হয়ে চেপে বসেছে! একের পর এক কৃষক আত্মহত্যা করছেন। আইনশৃঙ্খলায় প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এর পরেও কীসের সাফল্য দাবি করছেন মুখ্যমন্ত্রী? মানসবাবুর কথায়, ‘‘গোটা বাংলা বারুদের স্তূপের উপরে বসে আছে! শ্রীবৃদ্ধি যদি কারও হয়ে থাকে, তৃণমূল দলটার হয়েছে।’’ কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান বিধায়কের আরও তির্যক মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত পরিশ্রমী। অনবরত জেলা সফর করছেন। কিন্তু তাঁর সেই পরিশ্রমের ফসল বাংলার মানুষ পাচ্ছেন কি না, জানি না! তবে তৃণমূল আয়তনে এবং সম্পদে প্রসারিত হয়েছে!’’ বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যেরও কটাক্ষ, ‘‘প্রথম ১০০ দিনের পরেই মুখ্যমন্ত্রী যখন ৯৯% কাজ করে ফেলার দাবি করছেন, তখন তাঁকে রূপকথার মেঘবালিকা বলেছিলাম! এখন ওঁর কথা শুনে সাঁঝবাতির রূপকথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE