—প্রতীকী ছবি।
বয়ঃসন্ধিকালে পা দেওয়া কিশোরীদের ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সরকার যে স্যানিটারি ন্যাপকিন কম পয়সায় বিলি করছে, তার মান শোচনীয় বলে অভিযোগ উঠছে প্রায় সমস্ত জেলায়। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরে একাধিক জেলার রিজ়ার্ভ স্টোর্স, মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার অফিস এবং আশা কর্মীরা এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছেন।
গুরগাঁওয়ের একটি সংস্থা বছর দু’য়েক আগে দরপত্রের মাধ্যমে রাজ্যে এই ন্যাপকিনের অধিকাংশ ভাগ সরবরাহ করে। এদের বিরুদ্ধে নিম্নমানের ন্যাপকিন সরবরাহের অভিযোগ থাকলেও মাসখানেক আগে ন্যাপকিন সংক্রান্ত নতুন একটি দরপত্রে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত চারটি সংস্থার মধ্যে এরা ফের থাকায় বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।
দক্ষিণবঙ্গের এক জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, ‘‘এখনও আমাদের জেলা রিজ়ার্ভ স্টোর্সে প্রায় দু’লক্ষ নিম্নমানের ন্যাপকিন পড়ে রয়েছে। কেউ নিতে চাইছে না। আবার ওই সংস্থা প্রাথমিক তালিকায় থাকায় আমরা হতবাক।’’
স্বাস্থ্য দফতরের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী কেনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাসের কথায়, ‘‘কিছু জেলা থেকে আসা অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন দফতরের প্রতিনিধিরা। নতুন দরপত্রে আগে সংস্থাগুলিকে ন্যাপকিনের নমুনা জমা দিতে বলা হয়েছিল। সেগুলি পরীক্ষার পরেই প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি সংস্থাকে বাছা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
২০১৮ থেকেই গ্রামাঞ্চলে কিশোরীদের আশা কর্মী মারফত ন্যাপকিন বিলির কর্মসূচি চালু হয়। ২০২২-এ নির্দেশিকা জারি করে বয়ঃসন্ধির মেয়েদের (১০-১৯ বছরের) ‘সাথী ন্যাপকিন’ দেওয়া শুরু হয়। ২৮টি স্বাস্থ্য জেলার প্রায় ৯৮ লক্ষ কিশোরীকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। ঠিক হয়, আশা কর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ছ’টি ন্যাপকিনের একটি প্যাকেট বিক্রি করবেন ছ’টাকায়। আশা কর্মীরা প্যাকেট-পিছু এক টাকা
অনুদান পাবেন।
এই ন্যাপকিনের ৮০ শতাংশ গুরগাঁওয়ের একটি সংস্থা সরবরাহ করছিল। উপভোক্তাদের অভিযোগ, ওই ন্যাপকিনে তুলো এত কম আর এত পাতলা যে রক্ত চুঁইয়ে পড়ে। জামাকাপড়ে, বিছানায় দাগ হয়ে যায়। এক সঙ্গে দু’টো-তিনটে ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হয়।
ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে দিনে অন্তত চার বার ন্যাপকিন বদলাতে বলেন চিকিৎসকেরা। অভিযোগ, সাথী ন্যাপকিনের মান এতই খারাপ যে, এক জন কিশোরীর দিনে অন্তত আটটি ন্যাপকিনের প্রয়োজন হয়। পাঁচ দিনে লাগে ৪০টি ন্যাপকিন। অভিযোগ, ওই ৪২ টাকা গ্রামের বহু গরিব পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। অভিযোগ, কিশোরীদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কম দামে ন্যাপকিন সরবরাহ করার সরকারি উদ্দেশ্য ন্যাপকিনের শোচনীয় মানের জন্য ব্যর্থ হচ্ছে। অধিকাংশই ন্যাপকিনের বদলে ফের টুকরো কাপড় ব্যবহার করছে।
পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়নের প্রধান ইসমত আরা খাতুনের কথায়, ‘‘কেউ ন্যাপকিন কিনতে চাইছে না। এক বার কেনার পরে
খারাপ মানের জন্য আশা কর্মীদের ডেকেই ভর্ৎসনা করছে। আবার ন্যাপকিন বিক্রি না করলে স্বাস্থ্য
দফতর থেকে আশা কর্মীদের উপরে চাপ আসছে। এতে মরিয়া হয়ে
অনেক আশা কর্মী স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছে সাথী ন্যাপকিনের প্যাকেটই ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করে আসছেন। সেই ন্যাপকিন আবার স্বনির্ভর গোষ্ঠী সরকারকে বিক্রি
করে দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy