Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Dilip Ghosh

শাহের জরুরি তলবে দিল্লি যাচ্ছেন দিলীপ, বৃহস্পতি সন্ধ্যার বৈঠকে কি ঘোষের মানভঞ্জনে উদ্যোগী অমিত?

দিলীপ ঘোষ এখন আর বিজেপির কোনও পদে নেই। শুধুই সাংসদ। তার পর থেকে দিলীপ নাকি নিজেকে দলের কাজকর্ম থেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, দিলীপকে স্বমহিমায় ফেরাতেই উদ্যোগী শাহ।

Amit Shah wants to meet BJP leader Dilip Ghosh on Thursday

অমিত শাহ (বাঁ দিকে) এবং দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ১১:৫২
Share: Save:

বুধবার রাতে এসেছিল অমিত শাহের ফোন। বৃহস্পতিবার বিকেলেই দিল্লি যাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই নিজের বাসভবনে দিলীপের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ওই বৈঠকে ডাক পাননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দিলীপকে কেন এই জরুরি তলব? দিলীপের কি কোনও ‘প্রাপ্তিযোগ’ রয়েছে? না কি সদ্য দলের সব পদ-হারানো বাংলার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপের মানভঞ্জনই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদ্দেশ্য? নানা জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে?

সদ্যই বাংলা সফরে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। মোট তিনটি কর্মসূচিতে দিলীপের সঙ্গে নড্ডার সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে প্রাক্তন সহ-সভাপতির সঙ্গে সভাপতির কোনও ব্যক্তিগত আলাপচারিতা বা আলাদা বৈঠক হয়নি। রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির বৈঠক এবং সাংসদ, বিধায়কদের সঙ্গে নড্ডার বৈঠকে নিয়মমাফিক হাজির ছিলেন দিলীপ। সেখানেও নাকি তিনি বিশেষ কথা বলেননি। সাধারণত তিনি সাংগঠনিক বৈঠকে সরব থাকলেও গত শনিবার ও রবিবার নিউ টাউনের হোটেলে বৈঠকে চুপচাপই ছিলেন। যা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, দিলীপ কিছুটা ‘অভিমানী’ হয়ে রয়েছেন।

গত ২৯ জুলাই দিলীপকে দলীয় পদ থেকে ‘মুক্তি’ দেওয়া হয়। তাঁর একমাত্র পরিচয় হয়ে যায় মেদিনীপুরের সাংসদ। কেন দিলীপকে দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তার কোনও কারণ কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে বলা হয়নি। তবে দিলীপ নিজে বলেছিলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের সাংসদদের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাংসদরা যাতে নিজের নিজের এলাকায় বেশি করে সময় দিতে পারেন, তাই এই পদক্ষেপ।’’ যদিও রাজ্য বিজেপিতে অন্য আলোচনা ছিল। অনেকেই বলেছিলেন, বার বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিষেধ অমান্য করে নিজের মতো চলার জন্যই দিলীপকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩১ জুন দিলীপকে ‘সেন্সর’ করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সে বার নড্ডা নয়, তাঁর হয়ে চিঠি পাঠান দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত নেতা অরুণ সিংহ। সেই চিঠি দিলীপকে পাঠানোর আগে প্রকাশ্যেও আনা হয়। গোটা ঘটনাপ্রবাহে ‘ক্ষুণ্ণ’ হয়েছিলেন দিলীপ। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাঁকে জানানোর আগে চিঠি সংবাদমাধ্যমে চলে আসা নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠদের কাছে।

দিলীপ ওই চিঠিপ্রাপ্তির পরে কিছু দিন চুপচাপও ছিলেন। তবে পরে ফের তিনি রাজ্য সংগঠনের ‘ভুলত্রুটি’ নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে সরব হতে শুরু করেন। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারপর্বে তিনি বাকি নেতাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই লড়াইয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই লড়াই চলার মধ্যেই তাঁকে দলীয় পদ থেকে সরানো হয়। রাজ্য বিজেপির অন্দরের অনেকে বলছেন, যে কারণেই পদ থেকে সরানো হোক না কেন, দিলীপ ‘ক্ষুব্ধ’। নিজের লোকসভা এলাকার বাইরে বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছেন না। যদিও বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের জন্য তারকা প্রচারকদের যে তালিকা রাজ্য বিজেপি প্রকাশ করেছে, তাতে নাম রয়েছে দিলীপের। তারই মধ্যে দিলীপকে তলব করেছেন শাহ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির প্রস্তাবিত বৈঠক সম্পর্কে রাজ্য বিজেপিতে একাধিক অভিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নড্ডা বাংলা সফরে দিলীপের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করলেও পরে দিল্লিতে এমনটা বলে থাকতে পারেন যে, রাজ্যের সংগঠন বিস্তারে দিলীপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাঁর নিজের এলাকার বাইরেও দিলীপকে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্যত্র ব্যবহার করা দরকার। সেই কারণেই শাহ আলাদা করে দিলীপের সঙ্গে কথা বলতে চান। বাংলায় ৩৫টি আসন জয়ের জন্য যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় বিজেপি নিয়েছে, তা সফল করতে কেমন পরিকল্পনা দরকার, তা নিয়েও কথা হতে পারে। সব মিলিয়ে দিলীপের ‘মানভঞ্জন’ এবং বাংলায় শক্তি বাড়াতে তাঁকে ব্যবহারই হবে বৈঠকের মূল আলোচ্য। দিলীপ ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নেতারা এটা ভাল করেই জানেন যে, বাংলায় দিলীপই সবচেয়ে ‘সফল’ নেতা। তিনি রাজ্য সভাপতি থাকার সময়েই দল লোকসভা বা বিধানসভায় উল্লেখযোগ্য ফলাফল করেছে। তিনি নিজে জিতেছেন এবং দলকেও জিতিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির কোথায় কোথায় এখনও সাংগঠনিক ত্রুটি রয়েছে, তা জানতেও শাহ দিলীপকে তলব করে থাকতে পারেন বলে দলের একটি অংশের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে।

আরও একটি আলোচনাও রাজ্য বিজেপিতে রয়েছে। যে জল্পনা অতীতেও অনেক বার হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল হলে বাংলা থেকে কি দিলীপের নাম আসতে পারে? তবে এমন জল্পনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছেন না দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা। তাঁদের বক্তব্য, এখন বাংলা থেকে দিলীপকে মন্ত্রী করা হলে বাদ দেওয়া হবে কাকে? লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে চার প্রতিমন্ত্রীর যাঁকেই বাদ দেওয়া হোক, সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব ভোটে পড়তে পারে। কিন্তু দিলীপকে মন্ত্রী না করলে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ, তিনি দলের ‘ঘরের ছেলে’ হিসাবেই পরিচিত।

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Ghosh Amit Shah BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE