Advertisement
১৯ মে ২০২৪
post office

জলবন্দি সেই প্রাচীন ডাকঘর এখনও কাদাময়

দু’একটি ব্যাঙ্ক শিবির করেছিল ঠিকই, তবে এখানকার মানুষের আর্থিক লেনদেনের প্রধান ভরসা ছিল মাড পয়েন্টের ওই পোস্ট অফিস।

কাদায় ঢেকেছে মাড পয়েন্ট ডাকঘর।

কাদায় ঢেকেছে মাড পয়েন্ট ডাকঘর। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘোড়ামারা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। পঞ্চায়েত অফিস, প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুলও। ভেসে গিয়েছে সুন্দরবনের দ্বীপ ঘোড়ামারার একমাত্র ডাকঘরও। ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে নষ্ট হয়েছে ডাকঘরের ফাইলপত্র, নথি আর কম্পিউটার। দেশের অন্যতম প্রাচীন এই টেলিগ্রাফ অফিস এখন দুর্গন্ধে ভরেছে।

সাড়ে তিন- চার হাজার মানুষের এই দ্বীপে কোনও ব্যাঙ্কেরই শাখা নেই। দু’একটি ব্যাঙ্ক শিবির করেছিল ঠিকই, তবে এখানকার মানুষের আর্থিক লেনদেনের প্রধান ভরসা ছিল মাড পয়েন্টের ওই পোস্ট অফিস। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সেটি জলে ডুবে যায়। ঝড়ের পরের দিন বিকেল থেকে জল নামতে শুরু করেছে। কিন্তু সেখানে এখন কোনও কিছুই অক্ষত নেই। পোস্টমাস্টার তরুণ প্রামাণিকের আক্ষেপ, ‘‘গিয়ে দেখলাম, সব নথিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

দেশের প্রাচীন পোস্ট অফিসগুলির মধ্যে অন্যতম হল ঘোড়ামারার এই পোস্ট অফিস। ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের পরে কার্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতি দেখে এসেছেন সেখানকার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অভিমন্যু মণ্ডল। পাশেই থাকেন তিনি। অবসরের পরে তাঁর কাজের মেয়াদবৃদ্ধি হয়েছে। অভিমন্যু সোমবার ফোনে বলেন, ‘‘এক হাঁটু জল ছিল পোস্ট অফিসের ঘরে। পরে জল নামতে দেখি, সব শেষ হয়ে গিয়েছে। কাগজপত্র সব ভেসে গিয়েছে।’’ কাদামাটি সরিয়ে সেই সব কাগজপত্র আর কিছু ফাইল আলাদা করতে পারলেও সেগুলি কতটা কাজে আসবে, তা বলা কঠিন।’’ ঝড়ে তাঁরও বাড়ি ভেঙে পড়েছে। পরিবার নিয়ে উঠেছেন একটি ‘ফ্লাড শেল্টারে’।

দ্বীপের খাসিমারা গ্রামের বাসিন্দা নিতাই পুরকাইতের অ্যাকাউন্ট রয়েছে পোস্ট অফিসে। তবে, লেনদেন হয় সামান্যই। চাষবাস করেন তিনি। জলোচ্ছ্বাসে ধান ভেসে গিয়েছে। পানের বরজও জলের তলায়। নিতাইবাবু বলেন, ‘‘পোস্ট অফিসে আমাদের খুব বেশি টাকা জমা থাকে না। জমা রাখি, আবার তুলে-ও নিই।’’ মন্দিরতলা বাজারের দোকানদার বিজয় কয়ালও বলেন, ‘‘দু’হাজার পাঁচ হাজার টাকা রাখতাম। আবার তুলে নিতাম। ব্যবসায় তো সব সময় টাকা দরকার হত। সেই ব্যবসাও নেই। তাই, লেনদেনের দরকার নেই।’’ কয়েক ঘণ্টার দুর্যোগে বিজয়বাবুর দোকান-বাড়ি
ভেসে গিয়েছে।

ঘোড়ামারা পোস্ট অফিসের অবসরপ্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার ঝন্টু রাউতের কথায়, ‘‘আমি অনেকদিন আগে অবসর নিয়েছি। পোস্ট অফিসই ছিল ওখানের মানুষের একমাত্র ভরসা। সকাল-বিকেল টাকার দরকার হলে দ্বীপের মানুষ
যাবেন কোথায়?’’

ডাকঘরের মতোই অবস্থা মন্দিরতলার ঘোড়ামারা মিলন বিদ্যাপীঠের। স্কুলবাড়ির একতলায় জল ঢুকে নষ্ট হয়েছে পড়ুয়াদের নথিপত্র। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ঘোষণা হলেও গোটা দ্বীপের যা অবস্থা, তাতে দু’বেলার খাবারের সংস্থান করাই কঠিন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চারী জানা ঘোড়ামারার বাসিন্দা নন। প্রশাসনিক স্তরে স্কুলের অবস্থা সবিস্তারে জানিয়েছেন। সঞ্চারীদেবী ফোনে বলেন, ‘‘ঘোড়ামারার মানুষের সর্বস্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। জানি না, কী ভাবে ওরা পরীক্ষা দেবে। তবে এটা ঠিক, পরীক্ষার আগে তো জীবন!’’

ঘরবাড়ির সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বইপত্র, খাতা ইত্যাদি সবই জলে ভেসে গিয়েছে। স্কুলের হস্টেলও জলের নীচে ছিল। সেই বাড়ি এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত। গোটা পরিস্থিতি জানিয়ে সঞ্চারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও পরামর্শ চেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

post office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE