Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
মৃত ৩, এখনও নিখোঁজ বহু

পুলিশ তাড়া দিতেই বাঁধ ভাঙল জনতার

রাত আটটা থেকেই অল্পঅল্প বৃষ্টি হচ্ছিল। আকাশের চেহারা দেখেই খেয়া পারাপার বন্ধ করে দিয়েছিলেন মাঝিরা। বুঝেছিলেন, এ ভাগীরথীতে নৌকা নামানো মানে মরণ ডেকে আনা! তার পরেই শুরু হল ঝড়।

শূন্য দৃষ্টি। উদ্বেগের প্রহর।— নিজস্ব চিত্র

শূন্য দৃষ্টি। উদ্বেগের প্রহর।— নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
কালনা ও শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০৩:৫০
Share: Save:

রাত আটটা থেকেই অল্পঅল্প বৃষ্টি হচ্ছিল। আকাশের চেহারা দেখেই খেয়া পারাপার বন্ধ করে দিয়েছিলেন মাঝিরা। বুঝেছিলেন, এ ভাগীরথীতে নৌকা নামানো মানে মরণ ডেকে আনা! তার পরেই শুরু হল ঝড়। সঙ্গে দুদ্দাড় বৃষ্টি। কালনা শহরের খেয়াঘাটে তখন ভবা পাগলার মেলা ফেরত কয়েক হাজার লোকের ভিড়। তাঁদের দাবি, ভুটভুটি ছাড়তেই হবে। পৌঁছে দিতে হবে ও-পারে, শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ঘাটে। মাঝিদের নিষেধে থোড়াই কেয়ার!

মাঝিরা প্রমাদ গুনলেন। খেয়াঘাটে তখন তিন জন মাত্র পুলিশ। জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। খবর গেল বর্ধমান জেলা পুলিশ কর্তাদের কানে। তাঁরা চলেও এলেন ঘাটে। পাক্কা দেড় ঘণ্টা বাদে বৃষ্টি থামল। তার মধ্যে ভিড় আরও বেড়েছে। এবং ভুটভুটি না-ছাড়ায় জনতা তত ক্ষণে খেপে উঠেছে। এই অবস্থায় হাজার ছয়-সাত লোকের ভিড় ঠেলে পুলিশ জেটিতে পৌঁছনোর আগেই যা ঘটার ঘটে গেল। যে নৌকায় সাকুল্যে আঁটে জনা ষাটেক, তাতেই উঠে পড়লেন অন্তত শ’দুয়েক পুরুষ-মহিলা-বাচ্চা! ভিড়ের চাপে ভুটভুটিই গেল ভেঙে! যাত্রীরা সটান নদীতে। বেশির ভাগই নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা। পুলিশ ও ঘাটের লোকজনের চেষ্টায় জলে হাবুডুবু খাওয়া অনেককে উদ্ধার করা হয়। কয়েক জন সাঁতরে পাড়ে ওঠেন।

রবিবার ভোর থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে নৃসিংহপুর ঘাট। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নৌকাডুবির পর রাত কাবার। কিন্তু খানকয়েক নৌকা নিয়ে গঙ্গায় ঘোরাঘুরি ছাড়া তেমন কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সকাল সাতটা নাগাদ ঘাটে জড়ো হওয়া মানুষজন নিজেরাই নদীতে নামার তোড়জোর শুরু করেন। বাধা দেয় পুলিশ। কাজ না হওয়ায় লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে তারা। এতেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। পুলিশকে লক্ষ করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। ফলে পিছু হটতে হয় পুলিশকে। নদীর পাড়ে থাকা কালনা পুরসভার একটি লঞ্চ-সহ ছ’টি ভুটভুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।

খবর যায় দমকলে। নদীর পাড়ের অনেক আগেই দমকলের ইঞ্জিন আটকে দেয় উত্তেজিত জনতা। দমকলের গাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেলও ছোড়া হয়। তাতে জখম হন তিন দমকল কর্মী। পুলিশ কর্মীদের চার দিক থেকে ঘিরে রাখা হয়। বেলার দিকে বিভিন্ন থানা থেকে বিশাল বাহিনী এনে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। রবার বুলেট চালানোর পাশাপাশি ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। সঙ্গে লাঠিচার্জ। অভিযোগ, ওই সময় এবং পরে পুলিশ গ্রামে ঢুকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মারধর ও ভাঙচুর চালিয়েছে। গ্রাম থেকে ২০ জনকে আটক করে। রবার বুলেটে শান্তিপুরের বাগানপাড়ার এক যুবক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। এর পরে ধীরে ধীরে উদ্ধারকাজে গতি আসে। সকালে দু’জন ডুবুরি নামানো হয়েছিল। দুপুরে আরও ছ’জনকে নামানো হয়। একই সঙ্গে নৌকা ও স্পিড বোটে গঙ্গাবক্ষে নজরদারিও চালানো হচ্ছে। রাতে কালনা খেয়াঘাটের কাছেই উদ্ধার হয়েছে এক যুবতী এবং দুই শিশুর দেহ। এক জন ছেলে, এক জন মেয়ে। বয়স ছ’সাত বছর। নিখোঁজ অন্তত আরও ১৩ জন।

পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নৌকাডুবির জায়গায় উদ্ধার কাজটাই জরুরি। সেখানে কাঁদানে গ্যাস বা শূন্যে গুলি কোন কাজে আসবে? এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হচ্ছে।’’ নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘উদ্ধারকাজে ঢিলেমির অভিযোগ ঠিক নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

boat accident Ferry Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE