কেশববাড় গ্রামে তৈরি হচ্ছে মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র।
উৎসবের এই মরসুমে দম ফেলার ফুরসত নেই কেশববাড়ের মৃৎশিল্পীদের। সেই বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শুরু হয়েছে ঠাকুর গড়া। দুর্গা পেরিয়ে এখন জোরকদমে চলছে কালী প্রতিমায় রূপটান।
অথচ এই শিল্পীদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে নেই পৌত্তলিক পুজো-আচ্চা। এঁরা সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের। তবে ধর্ম ছাপিয়ে শিল্পীসত্তার পরশেই প্রাণ পায় মৃণ্ময়ী মূর্তি।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার খণ্ডখোলা পঞ্চায়েতের কেশববাড় গ্রামে ৫১টি চিত্রকর পরিবারের বাস। মুসলিম এই শিল্পীরা বংশানুক্রমিক ভাবে পটের ছবি আঁকেন। এখন পোশাকে রঙিন নকশা তোলা, মাটির কাপে বাহারি ছবি আঁকার কাজও করছে পরিবারগুলি। এদের মধ্যেই ৮টি পরিবার বছরভর ঠাকুর গড়ে। চিত্রকর পরিবারের শিল্পীদের গড়া হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে গুজরাত, মুম্বই, উত্তরপ্রদেশে পাড়ি দেয়। এ বার কালীপুজোতেও এক একটি পরিবারের হাতে রয়েছে শতাধিক প্রতিমার বরাত।
গ্রামের ওলা বিবির থানের কাছেই কালী প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দিচ্ছিলেন সুষমা চিত্রকর। সুজাতা চিত্রকর আবার স্বামী তাপসের সঙ্গে প্রতিমায় চক্ষুদানে ব্যস্ত। পরিবারের নবীনরাও রপ্ত করে ফেলেছে ঠাকুর গড়ার খুঁটিনাটি। তাপসের এক ছেলে আইটিআই পড়ুয়া। কলেজ এখন বন্ধ। বাবা ও মায়ের সঙ্গে তিনিও তাই প্রতিমা গড়ছেন।
তাপস বলছিলেন, ‘‘দাদুর আমল থেকে আমরা ঠাকুর বানাচ্ছি। আমাদের প্রতিমা বহু দূরে যায়। মুসলিম হলেও ধর্ম শিল্পকর্মে বাধা হয়নি।’’ আরেক শিল্পী তপন চিত্রকরের কথায়, ‘‘আমার স্ত্রী চায়নাও প্রতিমার কাজ জানে। এটাই আমাদের মূল জীবিকা। আমাদের তৈরি প্রতিমার চাহিদা দেখে মৃৎশিল্পী হিসেবে গর্ব হয়।’’
এই গ্রামের সম্প্রীতির ঐতিহ্য গর্ব করার মতোই। প্রতি বছর চৈত্র মাসে চিত্রকর পাড়ার উদ্যোগে ওলা বিবির উৎসব হয়। সেখানে মুসলিমদের ভিড় জমান বহু হিন্দু ভক্তও। সমর গুছাইত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘বিভেদ ভুলে মিলেমিশে থাকার এই রীতিই তো আমাদের সম্পদ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy