শম্ভুকে ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকারের ‘মাওবাদী প্যাকেজ’ মেলেনি। মেলেনি পুলিশে চাকরি। সেই হতাশাতেই মাইন পোঁতার তোড়জোড় করছিল বর্তমানে তৃণমূলের নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচিত পাঁচ যুবক। লালগড়ে মাইন উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে হেফাজতে চেয়ে আদালতে এমনটাই জানাল পুলিশ।
সোমবার শম্ভু হাঁসদা-সহ পাঁচ অভিযুক্তকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করে ৭ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। মাইন উদ্ধারে মূল অভিযুক্ত শম্ভু লালগড়ের রামগড় অঞ্চলের শালুকা (পশ্চিম) বুথের যুব তৃণমূল সভাপতি। বাকিরাও শাসকদলের কর্মী-সমর্থক। জানা যাচ্ছে, এরা সকলেই ২০০৯-১০ পর্বে মাওবাদীদের গণ মিলিশিয়া কমিটিতে ছিলেন। পালাবদলের পরে শাসকদলে ভিড়েছেন।
স্বতঃপ্রণোদিত ওই মামলার অভিযোগপত্রে পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচ অভিযুক্ত রাজ্য সরকারের মাওবাদী প্যাকেজে পুলিশের চাকরি না পেয়ে মানসিক হতাশায় মাইন সংগ্রহ করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করেছিল। এ জন্য ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিল। এ সব অভিযুক্তরা স্বীকার করেছে বলেও পুলিশের দাবি। কাদের কাছ থেকে তারা মাইন জোগাড় ছিল তা জানতে জেরা করা প্রয়োজন বলেই অভিযুক্তদের হেফাজতে চায় পুলিশ। ঝাড়গ্রামের জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘পাঁচজনের বিরুদ্ধে বেআইনি বিস্ফোরক মজুতের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, জীবনের মূলস্রোতে ফেরার ‘প্যাকেজ’ না পেয়ে সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু প্রাক্তন মাওবাদী ক্ষোভ জানিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৈঠকও করেছেন তাঁরা। তবে সেই হতাশায় মাইন সংগ্রহ— এমন ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। অভিযুক্তেরা তৃণমূল নেতা-কর্মী হওয়ায় সরব বিরোধীরা। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের দাবি, ‘‘মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাত আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে তৃণমূল আবার সেই পুরনো দিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘শাসক দলে কিছু সুবিধাবাদী লোক থাকেই। দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে কেউ অন্তর্ঘাত করলে সে বিষয়ে উচ্চ নেতৃত্ব উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।’’
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ি অঞ্চলের ধরমপুর চক থেকে ওই পাঁচ যুবককে প্রথমে মাদক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের কাছে মিলেছিল ১৫ কেজি তরল মাদক। পরে শম্ভুকে জেরা করে বুড়িশোল গ্রামে তার বাড়ির গোয়ালঘর থেকেই দু’টি তাজা মাইন পাওয়া যায়। অভিযুক্তদের আইনজীবী কৌশিক সিংহ অবশ্য এ দিন আদালতে দাবি করেন, স্রেফ সন্দেহের বশে তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy