Advertisement
১৭ মে ২০২৪
দুই বর্ধমানের সেরা পাঁচ

পরিশ্রমেই সফল ওরা

দ্বৈপায়নের বাবা দেবব্রত দুবে কুড়মুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট। দিদি দীপান্বিতা রেলওয়ে মেল সার্ভিসে চাকরি করেন। তবে ৪৭৯ পেয়েও খুশি নয় বর্ধমান শহরের কালনা রোডের ভদ্রকালী এলাকার বাসিন্দা দ্বৈপায়ন।

দ্বৈপায়ন ও রিয়া। নিজস্ব চিত্র

দ্বৈপায়ন ও রিয়া। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ১২:৩০
Share: Save:

মাধ্যমিকে ঠাঁই হয়েছিল মেধাতালিকায়। তাই এ বারও একটা আশা ছিল। কিন্তু আগের ফল যে সে টপকে যাবে উচ্চ মাধ্যমিকে, ভাবেনি আসানসোল ওল্ড স্টেশন হাইস্কুলের ছাত্র রোহিত কুমার। ৪৮৫ পেয়ে রাজ্যের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে সে। সেই স্থানে রয়েছে আসানসোলেরই আর এক ছাত্র, ঊষাগ্রাম বয়েজ হাইস্কুলের শমীক দত্ত। মেধাতালিকায় জায়গা না পেলেও ভাল ফল করেছে দুর্গাপুরের বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশন ফর গার্লসের ছাত্রী ঈশিতা নন্দী। সে পেয়েছে ৪৭৯। একই নম্বর পেয়ে নজর পেড়েছে বর্ধমান টাউন স্কুলের ছাত্র দ্বৈপায়ন দুবে। ভাল নম্বর পেয়েছে কালনার হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিয়া গায়েনও।

আসানসোলের ঊষাগ্রামের আটাচাকি গলিতে অ্যাবসেস্টসের ছাউনির ছোট দু’কামরার বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে রোহিত। মাধ্যমিকে সে রাজ্যে ষষ্ঠ হয়েছিল। রোহিত এ দিন বলে, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক অনেক কঠিন, জানতাম। তাই দ্বিগুণ পরিশ্রম করেছি। ফলও পেলাম। তবে এতটা ভাল ফল হবে ভাবিনি!’’ স্থানীয় এক চিকিৎসেক চেম্বারে সামান্য মাস মাইনেতে কাজ করেন রোহিতের বাবা অসীমবাবু। সংসার চালাতেই হিমসিম হতে হয়। এ দিন বারবার কেঁদে ফেলেন তিনি। অসীমবাবু বলেন, ‘‘আমি চাই ছেলে আরও শিক্ষিত হোক। কিন্তু কী ভাবে খরচ সামাল দেব, জানি না!’’

দ্বৈপায়নের বাবা দেবব্রত দুবে কুড়মুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট। দিদি দীপান্বিতা রেলওয়ে মেল সার্ভিসে চাকরি করেন। তবে ৪৭৯ পেয়েও খুশি নয় বর্ধমান শহরের কালনা রোডের ভদ্রকালী এলাকার বাসিন্দা দ্বৈপায়ন। আরও কয়েকটা নম্বর বেশি পাওয়ার আশা ছিল তার। দেবব্রতবাবু জানান, গল্পের বই বা খেলার মাঠে যাওয়ার অভ্যাস ছিল না দ্বৈপায়নের। গৃহশিক্ষক-স্কুল নিয়ে দিনে ১৪ ঘন্টা বইয়েই ডুবে থাকত সে। মাঝেমধ্যে পড়ার ফাঁকে ক্রিকেট খেলা দেখতে ভালবাসত। দ্বৈপায়ন জানায়, ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় সে। একই ইচ্ছে তারা বাবা-মায়েরও। দ্বৈপায়নের কথায়, ‘‘পরিশ্রম করেছি ঠিক, তবু শিক্ষকেরা না থাকলে এটা হতো না।’’

কালনার ছোট দেউড়ি পাড়ার রিয়া গাইন অবশ্য পড়াশোনার সঙ্গে সমানে চালিয়ে গিয়েছে আঁকা, গান গাওয়া, গল্পের বই পড়া। হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৪৭১ পেয়েছে সে। দোতলা বাড়িতে বাবা-মা-ভাইয়ের সঙ্গে থাকে রিয়া। বাবা আলাউদ্দিন গাইন অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক। তবে পড়াশোনার ব্যাপারে মেয়েকে বেশি সহযোগিতা করতেন মা নাসরিন বেগম। তাঁর কথায়, ‘‘পড়াশোনায় মেয়ে বরাবর সিরিয়াস। দু’জন শিক্ষকের কাছে পড়া ছাড়াও বাড়িতেও পড়ায় বেশ খানিকটা সময় দিত।’’ আর রিয়া বলে, ‘‘সরকারি আমলা হতে চাই।’’

আসানসোলের মহিশীলা কলোনি এলাকার বাসিন্দা শমীক সোমবার সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। মঙ্গলবার সকালে টেলিভিশনের সামনে বসেছিল দুরুদুরু বুকে। কিন্তু পর্দায় তাঁর নাম ভেসে উঠতেই মুখে চওড়া হাসি। ৪৮৫ নম্বর পেয়ে সে-ও রাজ্যে পঞ্চম হয়েছে। কমার্সের ছাত্র শমীক বড় হয়ে চার্টার্ড ফার্ম গড়তে চায়। আর চায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা চালিয়ে যেতে।

দুর্গাপুরের বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশন ফর গার্লসের ছাত্রী ঈশিতা কত্থক নাচে পারদর্শী। সে জানায়, দিনে ৮-৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করত সে। অল্পের জন্য মেধাতালিকায় নাম না আসায় সামান্য হতাশ। তার বাবা বিক্রমবাবু আসানসোলের বিসি কলেজে কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক। বড় হয়ে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চায় ঈশিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE