Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সংসারের কী হবে, প্রশ্ন গ্রামে

ফিরে এল তিন যুবকের দেহ, শোকে থমথমে আকনবাগান

সাদা কাপড়ে মোড়া প্রিয়জনদের দেহের সামনে পরিবারের সদস্যেরা তো বটেই, গ্রামবাসীর অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন শুক্রবার। গাড়ি থেকে দেহগুলি নামানোর মতো অবস্থায় ছিল না।

স্বামীর দেহ ফিরেছে গ্রামে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত সন্তোষ মারান্ডির স্ত্রী। ছবি: পাপন চৌধুরী

স্বামীর দেহ ফিরেছে গ্রামে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত সন্তোষ মারান্ডির স্ত্রী। ছবি: পাপন চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

বিকেল ৪টে। গ্রামের মুখে দাঁড়াল শববাহী গাড়িটা। এই সে দিনও কোদাল, গাঁইতি নিয়ে কয়লা কাটতে গিয়েছিলেন গ্রামের যুবক বিনয় মুর্মু, সন্তোষ মারান্ডি ও কালীচরণ কিস্কু। সবাই বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, তাড়াতাড়ি ফিরবেন। ফিরলেন দেরি করে। তাঁরা নন, তাঁদের দেহ। তিন জনকে শেষবারের জন্য দেখতে ভেঙে পড়ল কুলটির আকনবাগান গ্রাম।

সাদা কাপড়ে মোড়া প্রিয়জনদের দেহের সামনে পরিবারের সদস্যেরা তো বটেই, গ্রামবাসীর অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন শুক্রবার। গাড়ি থেকে দেহগুলি নামানোর মতো অবস্থায় ছিল না। গাড়ির মধ্যেই নিয়ম মেনে শেষ আচারবিধি পালন করলেন পরিবারের সদস্যেরা। সেখানেই তাঁদের জানানো হয় শেষ শ্রদ্ধা। পরে স্থানীয় শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

রবিবার বিকেলে ওই তিন যুবক ‘অবৈধ’ কুয়ো খাদান খুঁড়তে গিয়ে তলিয়ে যান। শেষমেশ টানা ১৬ ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের দেহ উদ্ধার করে এনডিআরএফ। রবি থেকে বৃহস্পতি, এই ক’টা দিন গোটা গ্রাম ছিল ওই খাদানমুখী। রাতে গ্রামে খবর আসে, তিন জনেরই দেহ মিলেছে।

এর পরেই অপেক্ষায় ছিল গ্রাম, কখন আসবে দেহগুলি। সকাল ৮টা নাগাদ গ্রামে চলে আসেন কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে এসে সাহায্য চান মৃত সন্তোষের স্ত্রী সরবুতা। দু’বছরের শিশুকে আঁকড়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘জানি না, এ বার ঘরটা চলবে কি করে!’’ বলতে বলতেই মাটিতে পড়ে যান তিনি। তাঁকে পড়শি মহিলারা বাড়ি পৌঁছে দেন।

ছেলের দেহ ফিরছে গ্রামে, ততক্ষণে খবরটা কানে গিয়েছে মৃত কালীচরণের মা রমণীদেবীর কানেও। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু-সংবাদ শোনার পরে থেকেই বাড়ির সামনে দড়ির খাটিয়ায় কুঁকড়ে ছিলেন তিনি। কথা তো দূরঅস্ত‌্, চোখের পাতাজোড়াও খুলতে পারছিলেন না। ভাই নেই শুনে বৃহস্পতিবারই মধুপুর থেকে মায়ের কাছে এসেছেন সোনোকি কিস্কু। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে দিন আনা দিন খাওয়ার সংসার। ভাই নেই। এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, জানি না।’’

সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ বিনয়ের বাড়িতেও। বাড়ির উঠোনে নাগাড়ে কাঁদছিলেন তাঁর স্ত্রী প্রতিমা। অদূরেই মাটিতে বসে ভাত খাচ্ছিল মুর্মু পরিবারের ছোট্ট দুই ছেলে। সে দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে প্রতিমা বলছিলেন, ‘‘স্বামীর আয়েই বেশ চলছিল। এ ভাবে ঝুপ করে সংসারে আঁধার নামবে, বুঝতে পারিনি। তিন ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াব?’’

এই অনিশ্চয়তার মধ্যে তিনটি পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ বা পুরসভার চতুর্থ শ্রেণীর অস্থায়ী কাজে এই পরিবারগুলির লোকজনদের নিয়োগ সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখব।’’ কিন্তু যদি তা-ও হয়, আজ, শনিবার থেকে বাড়িতে উনুন চড়বে কী ভাবে, সেই প্রশ্নই তিন যুবকের পরিবারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mourning Kulti Illegal Coal Pit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE