নানা রকম কৃষি-যন্ত্র দেখতে আগ্রহ মাটিমেলার মাঠে। নিজস্ব চিত্র
মন দিয়ে ডাল চাষের পদ্ধতি নজর করছিলেন জামুড়িয়ার পরিহারপুরের শেখ জিয়ারুল, শেখ নাসিবুলেরা। তা দেখার ফাঁকেই বললেন, “আমাদের ও দিকে তো সে ভাবে ডাল বা তৈলবীজ চাষ হয় না। এই চাষ কী ভাবে করা যায়, তার প্রশিক্ষণ নেব।”
প্রাণিবিকাশ দফতরের স্টলে হাজির হয়েছিলেন পুরুলিয়ার সুজিষ্ণু মাহাতো, বাঁকুড়ার সহিস দাসেরা। কী ভাবে ব্যবসায় নামবেন, কোথায় গেলে ভর্তুকি মিলতে পারে, খোঁজখবর নিলেন সেখানে। ওই দফতরের পূর্ব বর্ধমানের আধিকারিক প্রেমজিৎ দাস বলেন, “মুরগি খামার তৈরির জন্য ভিন্ জেলার লোকও এ বার এসেছেন। আমরা মেলার প্রচার করার পাশাপাশি বিপণন বিভাগকেও কাজে লাগিয়েছি। সে জন্যই মানুষের উৎসাহ দেখা দিয়েছে।”
মেলায় ঘোরার ফাঁকেই অনেকে দাঁড়িয়ে পড়ছেন কৃষি-যন্ত্রের সামনে। অনেককে বলতে শোনা যায়, “এখানে সব রকম চাষের জন্যই যন্ত্র রয়েছে। এ সব দেখে অনেক সুবিধে হবে।”
২০১৩ সাল থেকে মাটি উৎসবের আয়োজন করছে কৃষি দফতর। প্রথম দু’বছর হয়েছিল পানাগড়ে। ২০১৫ সালে বর্ধমানের ঝিঙ্গুটির কাছে সাইয়ের মাঠে ওই উৎসব হয়। ২০১৬ সাল থেকে বর্ধমানের সাধনপুর কৃষি খামারের ভিতর ‘মাটি তীর্থ, কৃষি কথা’ নামে মেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছে ২৫ একর জায়গায়। বিকল্প চাষের পাশেই তৈরি করা হয়েছে আনাজ চাষের খেত। সেখানে ফোয়ারার মাধ্যমে জল দেওয়া হচ্ছে (স্প্রিঙ্কলার পদ্ধতি)। কেন এ ভাবে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা বোঝানোর ফাঁকে রায়না ২ ব্লকের এক কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক (কেপিএস) বলেন, “আনাজ চাষে এই পদ্ধতিতে জল দিলে সুবিধে। কিন্তু আলুর ক্ষেত্রে এমনটা করা যাবে না।”
চাষিদের নতুন কৃষি প্রযুক্তি শেখাতে ‘এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ (এটিমএ) তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। ওই প্রকল্পে জেলার প্রতিটি ব্লক থেকে ৫০ জন করে চাষিকে ‘মাটি তীর্থ, কৃষি কথা’য় নিয়ে এসেছে কৃষি দফতর। এ ছাড়া পাশের জেলা থেকেও প্রতিদিন ১০০ জন করে চাষি আনার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মেলার মাঠ ঘুরে বিভিন্ন চাষ সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছেন, কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের অন্যতম অধিকর্তা পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অন্য বারের তুলানায় এ বার চাষিরা বিভিন্ন ধান সম্পর্কে বেশি খোঁজ নিচ্ছেন। ধানের বীজ কী ভাবে পাওয়া যাবে সে সব জানছেন।” শক্তিগড়ের সুব্রত লায়েক, মেমারির রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, বর্ধমানের দেবুপ্রিয় চট্টোপাধ্যায়দের কথায়, “চাষিকে লাভ করতে হলে খেতজমি থেকে শ্রমিক কমাতে হবে। সে জন্য উন্নত প্রযুক্তি দরকার। এই ধরনের মেলা না হলে উন্নত কৃষিযন্ত্র দেখতে পাব না, সে দিক থেকে চাষিদের লাভ হবে। বড় চাষিরা লাভবান হলে ছোট চাষিরাও তার সুফল পাবেন।”
রাজ্যের উপ কৃষি অধিকর্তা (বর্ধমান) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনেকটা সময় ধরে নিবিড় প্রচার, গত তিন বছর ধরে স্থায়ী মেলার মাঠ তৈরি হওয়ার ফলে চাষিদের উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তার ফল মিলতে শুরু করেছে।” মেলায় আসা বিভিন্ন সংস্থার ম্যানেজারদেরও আশা, “পরিকাঠামোর জন্য বহুজাতিক সংস্থাগুলি এই মেলায় আসতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এই মেলা দিল্লির কৃষিমেলার মতো হয়ে উঠবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy