নিদর্শনগুলি খুঁটিয়ে দেখছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা। —নিজস্ব চিত্র।
সেন আমলের তাম্রশাসনে নাম পাওয়া যায় ‘বাল্লহিট্ঠা’র। মনে করা হয়, কেতুগ্রামের বালুটিয়ায় ওই জায়গা। রবিবার দুপুর নাগাদ সেখানেই বেশ কিছু প্রত্ন নিদর্শনের খোঁজ পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নত্বত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক রজত স্যানালের নেতৃত্বাধীন একটি দল। রজতবাবুর কথায়, ‘‘মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশগুলি পাল-সেন যুগের বলে মনে হচ্ছে। কিছু তার আগের বা পরের। তবে ব্যাপক ক্ষেত্রসমীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় এখনই।’’
এ দিন বর্ধমানের পুরাতাত্ত্বিক গবেষক ও ক্ষেত্র সমীক্ষক সর্বজিৎ যশকে সঙ্গে নিয়ে বালুটিয়া গ্রামে যান রজতবাবু। মানচিত্র তৈরি, প্রয়োজনীয় মাপজোক করার পরে সন্ধান করা হয় প্রাচীন নিদর্শনের। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের কাছে মাটির নীচ থেকে কিছু মৃৎপাত্রের টুকরোও মেলে। গবেষকদের দাবি, ওগুলোর বেশির ভাগই পাল-সেন যুগের। তবে কিছু টুকরো দ্বাদশ শতকের কাছাকাছি সময়েরও হতে পারে। সেগুলির মধ্যে কিছু প্রাচীন কৃষ্ণলোহিত মৃৎপাত্রও রয়েছে।
১৯১১ সালে কাটোয়ার কাছে ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত নৈহাটি গ্রাম থেকে তাম্রশাসন মিলেছিল। যা ‘নৈহাটি-লিপি’ বলে ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্বিকদের কাছে পরিচিত। সেখানে উল্লেখ মেলে বাল্লহিট্ঠার। বর্ধমানের পুরাতত্ত্ব গবেষক ও ক্ষেত্র সমীক্ষক সর্বজিৎ যশ বলেন, “সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন মানুষের বসবাস ও চাষের জন্য কয়েকটি অঞ্চল দান করেছিলেন। নৈহাটিতে ১৯১১ সালের জানুয়ারি মাসে মন্দির তৈরির উদ্দেশে খোঁড়াখুঁড়ির সময় সেন আমলের জমি দানের তাম্রপাত্ত পাওয়া যায়। তৎকালীন সীতাহাটির জমিদার বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায় কাটোয়ার এসডিও তারকচন্দ্র রায়কে সে বিষয়ে জানান। এসডিওই উদ্যোগী হয়ে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের হাতে তুলে দেন। যা গবেষকদের কাছে নৈহাটি-লিপি বলেও পরিচিত।” এ ছাড়াও কাটোয়া মহকুমা জুড়ে পাল-সেন যুগের একাধিক নিদর্শন মিলেছে এর আগে। বিশেষত, অজয় ও কুনুর নদীর পাড়ের মঙ্গলকোটের ‘বিক্রমাদিত্যের ঢিপি’ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে গবেষণার অন্যতম বিষয়। আটের দশক থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বারেবারে সেখানে খননকার্য চালিয়ে পাল-সেন যুগের নিদর্শন পেয়েছে। ওই এলাকায় জনবসতি গড়ে ওঠার পিছনে প্রকৃতির কী ভাবে সাহায্য তা নিয়েও গবেষণা চালানো হয়েছে। মঙ্গলকোটে ঘুরে গিয়েছেন ডেকান কলেজের ভূতত্ত্ববিদ এসএন রাজগুরু। বিশ্বভারতীর প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও প্রত্ন বিভাগের সুচিরা রায়চৌধুরী বলেন, “মঙ্গলকোটের ইতিহাস অনেক পুরনো। তবে কাটোয়ার কাছে নৈহাটিকে ঘিরে প্রত্ন-অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।”
এ দিন উদ্ধার হওয়া নির্দশনগুলিও আরও ভাল ভাবে সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন রজতবাবু। এখনই বড় কোনও সম্ভাবনার কথা নিশ্চিত ভাবে না বললেও এই এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নিয়ে কাজ চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy