বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রত মণ্ডলকে জামিন না দিলে, আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর পরিবারের সদস্যদের মাদক-মামলায় ফাঁসানো হবে, এই মর্মে হুমকি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেটির প্রেরক হিসেবে নাম ও সই রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের এগজ়িকিউটিভ আদালতের আপার-ডিভিশন ক্লার্ক (ইউডিসি) বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের। বুধবার বাপ্পা তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন’-কে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন, বর্ধমান আদালতের এক আইনজীবী-সহ তিন জন হুমকি-চিঠি দিয়ে তাঁকে ‘ফাঁসানোর’ চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বাপ্পার পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটিও।
তৃণমূল প্রভাবিত ওই সংগঠনটির সূত্রে দাবি, বাপ্পা তাদের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তিনি ‘ভীত ও সন্ত্রস্ত’। তাঁর অভিযোগ, এক জন মুহুরি, টাইপিস্ট ও আইনজীবী দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি ভাবে হলফনামা বার করতে চাইলে আদালত তাতে বাধা দেয়। তার পরে থেকেই, তাঁরা বাপ্পার নামে অভিযোগ করে চলেছেন। বাপ্পার ওই চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও হুমকির মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এ দিকে, এ দিন বিকেলে সংগঠনটির তরফে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলার কাছে তাঁদের সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাপ্পার সঙ্গে ‘ষড়যন্ত্র’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি, মৌখিক ভাবে ওই আইনজীবী কেন বাপ্পাকে ফাঁসাতে চাইছেন, সংগঠনের নেতৃত্ব তা-ও ব্যাখ্যা করেন বলে দাবি।
এ দিন জেলাশাসকের দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে বাপ্পার অভিযোগ, “ওই আইনজীবী আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।” তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সংগঠনটির জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ সাঁইয়ের দাবি, “আমাদের কাছে কিছু সন্দেহজনক নাম রয়েছে। প্রশাসনকে বলেছি। আমরা চাই, ওই উড়ো বা ভুয়ো চিঠির বিষয়ে ঠিক তদন্ত হোক।”
এ দিন মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস ও জেলাশাসক আলাদা ভাবে বর্ধমান আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিষয়টি নিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা বলেন, “উড়ো বা ভুয়ো চিঠির নেপথ্যে এক জন আইনজীবী জড়িত থাকতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সে জন্য আমরা জেলাশাসকের কাছে গিয়েছিলাম। প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে, তাতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। ওই আইনজীবী আদালত চত্বরেও বসেন না।” অন্য এক আইনজীবী অরূপ দাসের দাবি, “যাঁকে নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে, ২০১৪ থেকে অনৈতিক কাজের জন্য বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি সংগঠনের সদস্য নন।” সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
এ দিকে, এ দিন সকালে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বেশ কয়েক জন সাদা পোশাকের পুলিশ বাপ্পাকে বর্ধমানের একটি জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলেও জানা গিয়েছে। ওই চিঠি দেখিয়ে তাঁর সই কি না, সিলমোহরটি কী এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে বাপ্পা বলেন, “তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করব।” হুমকি-চিঠির প্রসঙ্গে, আসানসোল দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি।” পাশাপাশি, চিঠি-তদন্তে বর্ধমান এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের তিন পুলিশকর্মী এসেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy