পশ্চিম বর্ধমানের কুলডিহা আদিবাসী পাড়ায় শালপাতার থালা তৈরিতে ব্যস্ত এক মহিলা। ছবি: বিপ্লব ভট্টাচার্য।
শীত পড়ার আগেই বনভোজন করার পরিকল্পনা করে ফেলে আমজনতা। দূরে হোক বা কাছে, ২৫ ডিসেম্বর এলেই শীতের মিঠে রোদ পিঠে নিয়ে সকলে বেরিয়ে পড়েন। তবে পরিবেশ রক্ষায় পিকনিক করার জায়গায় থার্মোকল বা প্লাস্টিকের থালা, বাটি, গ্লাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ। তখন কদর বাড়ে শালপাতার থালা, বাটির। লক্ষ্মীলাভের আশায় বছরের এই বিশেষ দিনগুলির দিকে তাকিয়ে থাকেন এগুলি তৈরি যুক্ত কাঁকসার মানুষজনও। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে মহাজনেরা শালপাতার থালা, বাটিগুলি কিনে নিয়ে যাওয়ায় আয় কম হয় বলে দাবি। সে জন্য, এই শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের আবেদন, কাঁকসা ব্লকে একটি শালপাতার ক্লাস্টার তৈরি করা হোক।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার অজয়, দামোদর নদের পার-সহ বিভিন্ন জঙ্গলের পাশে পিকনিক করতে আসেন বহু মানুষ। আর এখন থার্মোকল, প্লাস্টিকের থালা, বাটি, গ্লাস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সে জন্য গুরুত্ব বেড়েছে কাঁকসা ব্লকের। কারণ, এই ব্লক জেলার জঙ্গলমহল এলাকা হিসাবে পরিচিত। এখানে রয়েছে বন বিভাগের বর্ধমান ডিভিশনের সব থেকে বড় জঙ্গল। আর এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে এলাকার বহু মানুষের রোজগার জড়িয়ে রয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে শালপাতা, কেন্দুপাতা সংগ্রহ, জ্বালানির শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে জীবনযাপন করেন জঙ্গল পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু মানুষ। তবে সব থেকে বেশি রোজগার হয় শালপাতার থালা তৈরি করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসা ব্লকে প্রায় ৭৮টি আদিবাসী গ্রাম রয়েছে, যেগুলি বেশির ভাগ জঙ্গলের আশপাশে গড়ে উঠেছে। সেই সব বাসিন্দাদের অধিকাংশ শালপাতার থালা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। সে সব মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সারা বছর শালপাতার থালা তৈরি করলেও, শীতের মরসুমে এর চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। আর তার ফলে দামও বেশ কিছুটা বেশি মেলে তাঁদের। তাঁরা জানান, বছরের অন্য সময়ে ১,০০০ শালপাতার থালা তৈরি করতে পারলে মজুরি মেলে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মতো। আর শীতকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৫০ টাকার মতো। কাঁকসার আদকা গ্রামের বুদি মুর্মু জানান, পরিবারের তিন মহিলা এই কাজ করেন। সারা বছর এই কাজ করলেও, পিকনিকের মরসুমে চাহিদা বেশি থাকায় এই সময়ে কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে যায়। তিনি বলেন, “আশ্বিন মাসের শুরু থেকে এই কাজের গতি বেড়ে যায়। এ সময়ে মাঠে কাজ খুব একটা থাকে না। যত বেশি শালপাতার থালা তৈরি করতে পারব, আমাদের আয়ও তত বেশি হবে।” তবে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনদের আক্ষেপ, তাঁদের কাছ থেকে মহাজনেরা শালপাতার থালাগুলি কিনে নিয়ে যান। সরাসরি বাজারে বিক্রি করার সুযোগ থাকলে, উপার্জন আরও একটু বেশি হত। মলানদিঘির চুমকি টুডু, সুমিত্রা হেমব্রমেরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে কাঁকসা ব্লকে একটি শালপাতার ক্লাস্টার তৈরির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেটি আজও হয়নি। সেটি তৈরি হলে আমরা নিজেরাই সব বাজারে বিক্রি করতে পারতাম।”
কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদেরও পরিকল্পনা রয়েছে এই এলাকায় একটি শালপাতার ক্লাস্টার তৈরি করার। দ্রুত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy