বড়নীলপুর পুলিশ লাইনের কাছে সচেতনতা হোর্ডিংয়ের সামনেই বেলমেট ছাড়া যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।
মণ্ডপে প্রচার, পুলিশের টহল থেকে বিভিন্ন মোড়ে ‘নো এন্ট্রি’— সবই ছিল। তারপরেও পুজোর চার দিন রাস্তা দাপিয়ে বেড়াল হেলমেটহীন মোটরবাইক। এক একটা বাইকে অনায়াসে তিন-চার জনকে সওয়ার হয়ে ঘুরতে দেখা গেল নানা মণ্ডপে।
কয়েকজনের সঙ্গে অবশ্য হেলমেট ছিল। তবে মাথায় নয়, কারও মোটরবাইকের হাতলে, কারও হাতে। কার্জন গেট চত্বর হোক বা বড়নীলপুর, পুলিশের সামনে দিয়েই অবাধে ছুটছিল মোটরবাইক। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের যদিও দাবি, “জোরে মোটরবাইক চালানো নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শহরের ভিতর বিভিন্ন ‘নো এন্ট্রি’ জোনে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে মোটরবাইক চালানো ও হেলমেটহীন অবস্থায় চালানোর জন্য নিয়ম মাফিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।”
পঞ্চমীর দিন থেকেই বর্ধমান শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডে বিকেল থেকে মোটরবাইক ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল জেলা পুলিশ। নিষেধাজ্ঞা থাকার কথা আজ, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত। কিন্তু হঠাৎ করে ষষ্ঠীর দিন বর্ধমান থানা থেকে জানানো হয়, বীরহাটা থেকে আলিশা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত জিটি রোডের উপর মোটরবাইকও চলাচল করবে না। একাধিক পুলিশ কর্মীকে দেখা যায় বীরহাটা মোড়-সহ নানা জায়গায় দাঁড়িয়ে মোটরবাইকগুলিতে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে। এ নিয়ে চরম আলোড়ন দেখা দেয় শহরে। রাজনৈতিক ‘চাপ’ বাড়ে বলেও জানান পুলিশের কিছু কর্তা। শেষমেশ, কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই সিদ্ধান্ত তুলে নিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
ফল, ষষ্ঠীর রাত থেকেই সব টহল এড়িয়ে, নো এন্ট্রির বাধা পেরিয়ে শহর দাপায় মোটরবাইক। শহরের বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষোভও জানান তা নিয়ে। তাঁদের দাবি, ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় দ্রুতগতির মোটরবাইক নানা কায়দায় ‘ডজ’ মেরে এগিয়ে চলেছে। আরোহী অন্তত তিন জন। ধাক্কা লেগে ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটছে। মণ্ডপে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার চললেও বাইক আরোহী বা চালক করাও মাথায় হেলমেট নেই বলেও তাঁদের দাবি। এমনকী, রাতেদিনে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মোটরবাইকে দুই সন্তানকে নিয়ে যে দম্পতিরা শহরের পুজো দেখতে এসেছেন তাঁদের অনেকের মাথাতেও হেলমেট দেখা যায়নি। নতুনগঞ্জের প্রবীণা অমলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই সময় হেঁটে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতে ভালই লাগে। কিন্তু যে ভাবে মোটরবাইকগুলো যাচ্ছিল, তাতে ভয়ই লাগছিল।” মা-বাবাকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ছিলেন সন্দীপ্তা ঘোষ। তাঁর কথায়, “কার্জন গেটে পুলিশের সামনে দিয়েই তো হুঁশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে মোটরবাইকগুলি।”
জিটি রোডে কার্জন গেট চত্বরেও সব মাথায় হেলমেট ছাড়া।
মোটরবাইক চালকেরা যদিও বলছেন, হেলমেট তাঁদের সঙ্গেই ছিল। জামালপুরের জ্যোৎরাম থেকে চার জনকে নিয়ে আসা উজ্জ্বল মণ্ডল যেমন হেলমেট দেখিয়ে বলেন, “হাতলে লাগানো আছে আর কী! পুলিশ দেখলেই মাথায় পরে নিচ্ছি।” পরিজনকে নিয়ে বেরোনো মোটরবাইক চালকেরা তবুও সঙ্গে হেলমেট রাখছেন, কিন্তু যুবক বা তরুণীরা সেই সব ধার দিয়েই যাচ্ছেন না। এমনই এক কলেজ পড়ুয়া সুপ্রীতি রায় বললেন, “পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কলকাতার নামী পার্লারে গিয়ে চুল ঠিক করে এনেছি। হেলমেট পড়ে সেই চুল নষ্ট করি আর কী!” দামী দ্রুতগতির মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় ঘোরার ফাঁকেই সায়ন চৌধুরীর আবার দাবি, “পুলিশ রাস্তায় ভিড় সামলাতেই ব্যস্ত। এখন আমাদের দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই।”
বেশ কয়েকটি পুজো উদ্যোক্তাদেরও আক্ষেপ, “প্রশাসনের নির্দেশ মতো ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার করেছি। শহরের দুটি জায়গায় ওই বিষয়ের উপর থিমও হয়েছে। বাস্তবে শুধু মাত্র প্রচারই হয়েছে। কেউ কান দেয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy