Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Laudoha

দেউলে তৈরি শালপাতার ক্লাস্টার, উপার্জন বৃদ্ধির আশা

কাঁকসা ব্লকে জঙ্গল-এলাকা জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি। কাঁকসা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় আদিবাসী অধ্যুষিত প্রায় ৮০টি ছোট-বড় গ্রাম রয়েছে।

কাজে ব্যস্ত। দেউলের ক্লাস্টারে। নিজস্ব চিত্র

কাজে ব্যস্ত। দেউলের ক্লাস্টারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাউদোহা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪২
Share: Save:

পশ্চিম বর্ধমানে বিভিন্ন প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার কাঁকসায় শালপাতার ‘ক্লাস্টার’ তৈরির কথা জানিয়েছিলেন। বন দফতর (বর্ধমান ডিভিশন) জানিয়েছে, দেউলে তৈরিও হয়েছে ক্লাস্টার। এই মুহূর্তে এলাকার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেখানে। বনকর্তাদের দাবি, এর ফলে, এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের রোজগার এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়বে। প্রয়োজন পড়বে না মহাজনদেরও।

কাঁকসা ব্লকে জঙ্গল-এলাকা জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি। কাঁকসা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় আদিবাসী অধ্যুষিত প্রায় ৮০টি ছোট-বড় গ্রাম রয়েছে। তাঁদের জীবিকার বেশির ভাগটাই নির্ভর করে জঙ্গলের উপরে। শুকনো কাঠ, কেন্দু পাতা, শালপাতা সংগ্রহ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করেন। বেশির ভাগ মহিলা যুক্ত শালপাতা সেলাই করার কাজে। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাঁদের।

ওই মহিলারা জানাচ্ছেন, জঙ্গল থেকে শালপাতা সংগ্রহ করে বাড়িতে আনেন। পরে, সেগুলি ‘কুঁচি কাঠি’ দিয়ে সেলাই করে রোদে শুকোনো হয়। এর পরে মহাজনদের কাছে তা বিক্রি করা হয়। মহাজনেরা সেগুলিকে যন্ত্রের সাহায্যে থালার মতো রূপ দিয়ে বাজারজাত করেন। কিন্তু এই কাজে মহিলাদের উপার্জন খুব একটা বেশি হয় না। তাঁরা জানান, এক হাজার পাতা বিক্রি করতে পারলে দাম পাওয়া যায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আবার জোগান বেশি হলে উপার্জন আরও কমে। একটি পরিবারের তিন জন মিলে সারাদিনে এক হাজার পাতা তৈরি করতে পারেন। ফলে, খুব বেশি উপার্জন সম্ভব হয় না।

মহিলাদের এই সমস্যা সমাধানেই ক্লাস্টার তৈরির কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বন দফতরের দুর্গাপুরের রেঞ্জার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ক্লাস্টারটি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। যাঁরা শালপাতা সেলাই করেন, এখন তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শালপাতা সেলাই করা, যন্ত্রের সাহায্যে থালা, বাটি তৈরি করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটিই শেখানো হচ্ছে। স্থানীয় একটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়েই এই কাজ শুরু করেছে বন দফতর। সেখানে একটি সেলাই মেশিন ও থালা তৈরির যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি ভাবে ক্লাস্টারটি কাজ শুরু করলে মহিলাদের উপার্জন বাড়বে বলে আশা বনকর্তাদের। ডিএফও (বর্ধমান) নিশা গোস্বামী বলেন, “গ্রামোন্নয়ন প্রকল্প থেকে এই কাজ করা হচ্ছে। এলাকার মহিলারা উদ্বুদ্ধ হলে আরও বড় করা হবে এই কাজ। তাঁদের রোজগারও বাড়বে।”

কিন্তু কী ভাবে রোজগার বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে? তাঁদের ও ওই মহিলাদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, একটি শালপাতা সেলাই করে তাঁদের উপার্জন হয় ২৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা। অথচ, সেটির বাজারের দাম এক টাকা। পুরো প্রক্রিয়াটি ঠিক মতো কাজ করলে পুরো এক টাকা মহিলারা পাবেন। সে ক্ষেত্রে মহাজনদের উপরে নির্ভর করতে হবে না। পাশাপাশি, থালা, বাটি প্রভৃতি নিজেরা তৈরি করলে, তার দামও সরাসরি মহিলারাই পাবেন। ইতিমধ্যেই মহিলাদের তৈরি জিনিসপত্রগুলি বাজারজাত করার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে বলে বনকর্তারা জানান। সে জন্য স্থানীয় বিক্রেতাদের সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে।

এই ক্লাস্টারে কাজ করছেন মামণি সোরেন, সুমিত্রা সোরেন, মিরু সোরেনরা। তাঁরা বলেন, “আমরা টাকার অভাবে যন্ত্র কিনতে পারিনি। এখানে কাজ করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। আশা করি, আমাদের উপার্জনও বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Laudoha Sal Leaf Self help group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE