ক্ষোভ: ধর্নায় সান্ত্বনা। নিজস্ব চিত্র
দলের গোঁজ প্রার্থীদের নিয়ে ভাতার ও মেমারি ২ ব্লক শুরু থেকেই মাথাব্যথা ছিল জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। ভোটের দিন ওই দুই ব্লকই বিক্ষিপ্ত অশান্তি দেখল তৃণমূল বনাম নির্দল লড়াইয়ে।
অথচ প্রচারপত্র ছড়িয়ে ভোটের লড়াই থেকে নির্দলদের (আদতে তৃণমূলের গোঁজ) দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল জেলা তৃণমূল। হুঁশিয়ারি না মানলে দলগত ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। সেই হুঁশিয়ারি মেনে কয়েক জন নির্দল প্রার্থী ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, অনেকেই নিষেধাজ্ঞা মানেননি। সোমবার ভোটের দিন ওই অংশের সঙ্গেই গোলমাল বাধল তৃণমূলের। বেশ কিছু জায়গায় নির্দলদের দাপটে পিছিয়ে আসতে হল শাসকদলকেই!
জেলায় তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভাতার ব্লকে। ঝামেলাও সেখানে বেশি হয়েছে। এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ভাতারের সন্তোষপুরে নির্দল ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বচসা বাধে। অভিযোগ, নির্দল সমর্থকেরা শাসকদলের প্রার্থী জাহানারা খাতুনের উপরে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করেন। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। আহত জাহানারাকে প্রথমে ভাতার স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে পুলিশ এসে বিক্ষুব্ধ জনতাকে হটিয়ে দেয়। জাহানার বিপক্ষে থাকা নির্দল প্রার্থী ফিরোজা বিবি যদিও বলেন, ‘‘এখানে আমরাই তো কোণঠাসা! আমরা হামলা চালাব কী করে? যা গোলমাল পাকানোর ওরাই পাকিয়েছে।’’
ভাতারের ভূমশোরের ১০২ নম্বর বুথে নির্দল প্রার্থী সামিনা খাতুনের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী সান্ত্বনা বেগমকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুথে আসার আগেই তৃণমূল কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এই গ্রামেই মনোনয়ন জমার শেষ দিন খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী রমজান মোল্লা। অভিযোগ উঠেছিল দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। ভোটে বাধার অভিযোগ তুলে সান্ত্বনা ব্লক অফিসে ধর্নায় বসেন। বিডিওকে লিখিত অভিযোগও দেন। অভিযোগ উড়িয়ে সামিনা বলেন, ‘‘সান্ত্বনার লোকজন পঞ্চায়েত চালানোর সময় একশো দিনের কাজে প্রচুর টাকা নয়ছয় করেছে। ওদের বিরুদ্ধে এলাকায় জনরোষ ছিল। মানুষই সান্ত্বনাকে বাধা দিয়েছে।’’
নির্দলদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন বলগনা পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর সংসদের তৃণমূল প্রার্থী তৃণমূল প্রার্থী শেখ কুতুবুল হক। ব্লক অফিসে দায়ের করা অভিযোগে তিনি জানান, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ নির্দল প্রার্থীর সমর্থকেরা বুথে ঢুকে তাঁকে ও তাঁর এজেন্টককে মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেয়।
নির্দল বনাম তৃণমূল সংঘাতে তপ্ত ছিল মেমারি ২ ব্লকও। তৃণমূলের অভিযোগ, বোহার ২ পঞ্চায়েতের বড়াই গ্রামের নির্দল প্রার্থীর লোকজন এ দিন দুপুরে বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। তার পর থেকে ওই বুথে ভোট বন্ধ হয়ে যায়। ওই বুথে পুনর্নিবাচন হবে কিনা, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। ওই ব্লকেরই কুচুট পঞ্চায়েতের ছোটমশাগড়িয়া গ্রামে সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে থেকে দাপটে ভোট করাচ্ছিলেন নির্দল প্রার্থী বেবিনা বেগম। ঘণ্টা দুয়েক পরেও তৃণমূল সেখানে এজেন্ট বসাতে পারেনি। অভিযোগ, কিছু পরে তৃণমূলের বহিরাগতেরা এসে বুথে হামলা চালিয়ে ২৪৬টি ব্যালট ছিনিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হয়। ভোট শুরু হয়।
অন্য দিকে, গলসি ২ ব্লকের মসজিদপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অভিযোগ, নির্দল প্রার্থী পুতলি খাতুনের লোকজন ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কার্যত বুথ দখল করে নিয়েছিল। পুতলি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করিয়েছেন সেখানে। যদিও পুতলি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। উল্টো ছবি দেখা দিয়েছে গলসি ২ ব্লকের কুরকুবা অঞ্চলে তারানগর গ্রামে। সেখানে নির্দল প্রার্থী দুর্গা কিস্কু ও তাঁর এক সমর্থক শেখ বাবর আলিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই দু’জন বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি। যদিও অভিযোগ মানেনি তৃণমূল।
জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল বলেন, ‘‘বারবার অনুরোধ নিষেধ সত্ত্বেও যারা দলের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তারাই এ দিন যাবতীয় গোলমালের মূলে। আমাদের প্রার্থীদের বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোট দিতে দেওয়া হয়নি সমর্থকদেকর। দল ও প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy