Advertisement
২১ মে ২০২৪
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

স্কুলে এসে শুধুই খেলা, বলছে শিশুশ্রমিকেরা

ক্লাসের সময়ে মাঠে বল পায়ে দৌড়চ্ছে পড়ুয়ারা। ক্লাসরুমে বসে গল্পে মত্ত দুই শিক্ষক।শ্রেণিকক্ষে তালা, অথচ খাতায় কলমে স্কুল চলছে। কারণ পড়ুয়ারা হাজির খেলার মাঠে। আর শিক্ষিকারা মিড ডে মিলের রান্না দেখতে ব্যস্ত।

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০১:০০
Share: Save:

ক্লাসের সময়ে মাঠে বল পায়ে দৌড়চ্ছে পড়ুয়ারা। ক্লাসরুমে বসে গল্পে মত্ত দুই শিক্ষক।

শ্রেণিকক্ষে তালা, অথচ খাতায় কলমে স্কুল চলছে। কারণ পড়ুয়ারা হাজির খেলার মাঠে। আর শিক্ষিকারা মিড ডে মিলের রান্না দেখতে ব্যস্ত।

কাটোয়া ও দাঁইহাট পুরসভার শিশুশ্রমিক কেন্দ্রগুলিতে যে কোনও দিনই এমন ছবি দেখা যায়। একদিকে শিক্ষকদের উদাসীনতা, অন্যদিকে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল, সব জায়গাতেই খুদেদের দিয়ে কাজ করানোর প্রবণতায় এমনই হাল কেন্দ্রগুলির। যদিও স্কুলগুলির দাবি, বারবার চেষ্টা করার পরেও শিশুশ্রমিকদের স্কুলের চৌহদ্দিতে আনা সম্ভব হয়নি।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম দফতরের অধীনে জেলা শিশুশ্রমিক কল্যাণ পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় কাটোয়া পুরসভায় পাঁচটি ও দাঁইহাটে একটি কেন্দ্র রয়েছে। কাটোয়ার মণ্ডলপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগানেপাড়া বিদ্যালয়, ডিডিসি গার্লস, ভারতীভবন ও জানকীলাল শিক্ষাসদনে এবং দাঁইহাটের চাম্পচা রোডের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বছর কুড়ি ধরে শিশুশ্রমিক শিক্ষা কেন্দ্র চলছে। সোম থেকে শনি সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত স্কুলের ঘরেই চলে এই কেন্দ্র। নিয়ম অনুয়ায়ী, প্রতিটি স্কুলেই নয় থেকে চোদ্দো বছর বয়সী ৫০ জন পড়ুয়া থাকা আবশ্যক। সঙ্গে থাকবেন পুরসভা নিযুক্ত দুই শিক্ষক, এক রাঁধুনি তথা সহায়ক এবং এক জন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষক। বিভিন্ন দোকান, ইটভাটা, বস্তি এলাকা ঘুরে স্কুলছুটদের বিদ্যালয়মুখী করতে খুদেদের বোঝানোর পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন করাও কাজ এই শিক্ষকদের। নিয়মিত স্কুলে এলে মাসিক দেড়শো টাকা বৃত্তিও পায় পড়ুয়ারা। এমনকী, পড়ার পাশাপাশি ব্যাগ, পুতুল তৈরি, বই বাঁধানো, বাঁশের সামগ্রী তৈরিও শেখানোর কথা ওই কেন্দ্রগুলির। কিন্তু বাস্তব ছবি অনেকটাই আলাদা।

শহরের বেশিরভাগ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, স্কুলের রেজিস্টারে ৫০ জন করে পড়ুয়ার নাম থাকলেও বেশিরভাগ দিনই স্কুলে আসে ২৭ জন, কোথাও ৩৩ জন। যারা আসে তাদেরও সময়ে ক্লাস হওয়া তো দূর, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত একটি ঘরেই ক্লাস হয় অধিকাংশ স্কুলে। ফি ক্লাসে ৫০জন পড়ুয়ার জন্য ৫০টি বই আসার কথা থাকলেও বই আসে অনেক কম। ভারতীভবন কেন্দ্রের শিক্ষক ধর্মেন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘এ বছর ৩৫টি বই পেয়েছি। প্রাক্তন ছাত্রদের থেকে পুরোনো বই চেয়ে ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে।’’

জানা গিয়েছে, মিড-ডে মিলের জন্য ঘরও বরাদ্দ নেই কিছু কেন্দ্রে। যেমন ডিডিসি গার্লস। শিশুশ্রমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মিড-ডে মিল রান্না হয় সিঁড়ির নীচে নোংরা পরিবেশে। ওই কেন্দ্রের শিক্ষক কৃষ্ণপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায়, শিক্ষিকা উমা সোম জানান, এভাবেই কুড়ি বছর চলছে। স্কুল দুটোর বেশি ঘর না দেওয়ায় সিঁড়ির নীচই ভরসা।

ডিডিসি গার্লস কেন্দ্রের পড়ুয়া আমন চৌধুরী, সাবিত্রী চৌধুরী, জানকীলাল কেন্দ্রের পড়ুয়া গুড্ডু সাউদেরও দাবি, রোজ স্কুলে আসে তারা। কিন্তু পড়াশোনা রোজ হয় না। মাঠেই কাটে বেশির ভাগ দিন।

আবার শিশুশ্রমিকদের জন্য যে লেখাপড়ার বিশেষ ব্যবস্থা আছে, তা জানেনও না অনেকে। জানকীলাল কেন্দ্র সংলগ্ন লাইনপাড় এলাকায় মাটির ভাঁড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত কয়েকশো শিশুশ্রমিক। তাদের অভিভাবকদের দাবি, ওই কেন্দ্রের শিক্ষিকাদের কখনও পাড়ায় আসতে, কথা বলতে দেখেননি তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘জানতামই না আমাদের ছেলেমেয়েরাও কাজের পাশাপাশি স্কুলে যেতে পারে।’’

কাটোয়া পুরসভার ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সুজয় দাস বলেন, ‘‘বছরে দু থেকে তিন বার অনুমোদিত দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা আসে। তারমধ্যেই শিক্ষকদের বেতন, মিড-ডে মিল, বইয়ের খরচ সব মেটাতে হয়। তবে শিক্ষকরা কেন স্কুলে নিয়মিত আসেন না সে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Labour School Play
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE