সাব স্টেশনের অবস্থা পরিদর্শনে কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ সেজে নির্মীয়মাণ বিদ্যুতের সাবস্টেশনে ঢুকে নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীদের হাত-পা বেঁধে শৌচাগারে আটকে রেখে লুটপাটের অভিযোগ উঠল। যাওয়ার সময় বর্ষবরণের রাতে কর্মীদের পিকনিকের জন্য তৈরি মাংস-ভাতও খেয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার বর্ধমানের দেওয়ানদিঘি থানার ভান্ডারডিহির ঘটনা।
জেলার গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের ম্যানেজার নির্মলকান্তি বিশ্বাস ও জেলা পুলিশের ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) শৌভিক পাত্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বুধবার। নির্মলবাবুর দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীরা নির্মীয়মাণ সাব-স্টেশনের ঠিকাদার সংস্থার কর্মী, নিরাপত্তারক্ষীকে বন্দুক-চাকু দেখিয়ে শৌচাগারের ঘরে আটকে রেখেছিল। তারপরে ৩৩ কেভিএ ট্রান্সফর্মার ভেঙে তামার তার-সহ একাধিক সামগ্রী লুট করেছে।’’ প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার জিনিস লুট হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই সাবস্টেশন তৈরির কাজে হাত দেন গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কর্তারা। প্রথম থেকেই জমির সমস্যা ছিল। অভিযোগ, এখন বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম ঠিক মত না আসায় থমকে রয়েছে সাব স্টেশনের কাজ। এরই মধ্যে লুটের ঘটনায় কাজ আরও পিছিয়ে যাবে বলে কর্তারা মনে করছেন। তাঁরা জানান, এই সাব-স্টেশন সম্পূর্ণ হলে বর্ধমান ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে সরাসরি পরিষেবা দেওয়া যাবে। লো-ভোল্টেজের সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।
পুলিশ ও ঠিকাদার সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে ৯টা নাগাদ চার জনের একটি দল পুলিশের পোশাক পড়ে সাব-স্টেশনের ভিতরে ঢোকে। ঠিকাদার সংস্থার তিন কর্মী তখন মাংস রান্না করছিলেন। আর এক নিরাপত্তাকর্মী নিজের ঘরে ছিলেন। কর্মী বরুণ হাজরার দাবি, ‘‘নববর্ষের রাতে বলে খাসির মাংস এনে রান্না করছিলাম। তখনই পুলিশের পোশাকে, মুখ ঢাকা তিন জন আমাদের কাছে আসে। কিছু বলার আগেই চাকু ও পাইপগান ঠেকিয়ে পিছমোরা করে দড়ি ও গামছা দিয়ে হাত-পা বেঁধে শৌচাগারে ঢুকিয়ে দেয়।’’ নিরাপত্তারক্ষী অমিত গড়াইয়ের দাবি, ‘‘আমি ঘর থেকে বেরোতেই ‘ধর, ধর’ আওয়াজ শুনি। মুহূর্তে দু’জন এসে আমাকে দড়ি ও মাফলার দিয়ে বেঁধে ফেলে। তারপর পুলিশ টহল দেওয়ার সময় আমরা কী ভাবে সাড়া দিই সেটা জেনে নিয়ে আমাকেও শৌচাগারে ঢুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে সবাইকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়।’’ তাঁরা জানান, প্রতিদিন রাতে পুলিশ সাব-স্টেশনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টর্চের আলো দেখায়। প্রত্যুত্তরে তাঁরাও টর্চের আলো দেখান। এ দিন দুষ্কৃতীরা সেই কৌশল জেনে নিয়ে পুলিশকে ধোঁকা দিয়েছে বলেও তাঁদের ধারণা।
ঠিকাদার সংস্থার কর্তা মিনাজউদ্দিন আহমেদের দাবি, বলেন, ম্যাটাডর বা বড় গাড়ি নিয়ে পরিকল্পনা করেই সাব-স্টেশন লুটের জন্য এসেছিল দুষ্কৃতীরা। ট্রান্সফর্মার খোলা থেকে যে ভাবে বড় বড় লোহার সামগ্রী লুট করেছে তাতে মনে হয় কমপক্ষে ১২-১৫ জনের একটি দল ছিল। গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র অরুণ নন্দী বলেন, ‘‘পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে আবেদন করা হয়েছে।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারকে অভিযোগটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy