Advertisement
০২ জুন ২০২৪

ফাঁকা সার্কাসের ভরসা বাড়ির খুদেদের বায়না

ব্যবসার কাজে পূর্বস্থলী থেকে কাটোয়া এসেছিলেন দুই বন্ধু। কাজের ফাঁকেই চোখ যায় দেওয়ালে সাঁটানো সার্কাসের পোস্টারে। অমনি টিকিট কাটতে হাজির হন হাসিবুল রহমান ও গনি শেখ। কিন্তু মাথায় হাত।

কাটোয়ায় দশর্ক নেই, তাই সকালে বসেনি সার্কাসের আসর। নিজস্ব চিত্র।

কাটোয়ায় দশর্ক নেই, তাই সকালে বসেনি সার্কাসের আসর। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১৪
Share: Save:

ব্যবসার কাজে পূর্বস্থলী থেকে কাটোয়া এসেছিলেন দুই বন্ধু। কাজের ফাঁকেই চোখ যায় দেওয়ালে সাঁটানো সার্কাসের পোস্টারে। অমনি টিকিট কাটতে হাজির হন হাসিবুল রহমান ও গনি শেখ। কিন্তু মাথায় হাত। সার্কাসের কাউন্টারের পাশে সাঁটানো বিজ্ঞপ্তিতে জ্বলজ্বল করছে, পাঁচশো, হাজারের নোট নেওয়া হবে না। খুচরো চাই। পকেটে পাঁচশোর কড়কড়ে নোট থাকলেও এই বাজারে খুচরো! অগত্যা চেনাজানাদের কাছ থেকে শ’দুয়েক টাকা ধার করেই ছোটবেলার শখ মেটালেন দুই বন্ধু।

নোট সঙ্কটে প্রতিদিনের জীবনের মতো বিপাকে পড়েছে কাটোয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে আসা সার্কাসও। অন্য বার কার্তিক লড়াইয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই এসে পড়া সার্কাসে সপ্তাহান্তের ভিড় উপচে পড়ে। অন্য দিনও ব্যবসা চলে ভালই। কিন্তু এ বার সব হিসেবই চলছে নোটের মর্জিতে। কাটোয়া শহরের আরএমসি মার্কেটের পাশের মাঠে খান তিরিশেক তাঁবু খাঁটিয়ে সার্কাস বসেছে। ফি দিন দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যায় তিনটে করে শো চলছে। তবে ভিড় বেশ কম বলে দাবি সার্কাসের ম্যানেজারদের। ম্যানেজার রাজেশ মণ্ডল, মোল্লা সিদ্দিক রহমানেরা বলেন, ‘‘কার্তিক পুজোর পরে উৎসবের মেজাজে থাকেন কাটোয়ার মানুষ। আমরাও তাই চার বছর ধরে এই সময়েই আসছি। কিন্তু এ বার প্রথম থেকেই শো ফাঁকা যাচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনি-রবিবার তাও একটু লোক হচ্ছে। কিন্তু অন্য দিন তিনটে শো চলছেই না। কারণ প্রত্যেকেই যেটুকু টাকা ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া যাচ্ছে তা বুঝেশুনে খরচ করছেন। ফলে বাড়ির খুদেটার বায়না না হলে সার্কাসের পথে পা বাড়াচ্ছেন না কেউই। অন্য বার এই সময় ধান বিক্রির টাকা থাকে কৃষকদের হাতে। ফলে কাটোয়ার আশপাশের গ্রাম থেকেও সার্কাস দেখতে আসেন অনেকে। কিন্তু এ বার চাষিরাই নগদের অভাবে ধান কাটতে পারছেন না, এটিএম-ব্যাঙ্ক লাইন দিয়েই দিন কেটে যাচ্ছে। ফলে বিনোদন থাকছে ফাঁকাই। যদিও ওই সার্কাসের আর এক কর্মকর্তা সজল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, পরিস্থিতি একটু শুধরেছে। তাঁর কথায়, ‘‘হাতি, জলহস্তি, ঘোড়া ও বিদেশি পাখির খেলা দেখতে শনি-রবিবার মোটামুটি ভিড় হচ্ছে।’’ সঙ্গে রোলার জাগলিং, বারের খেলা, ফায়ার ডান্স ও জিমন্যাস্টিকের নানা খেলাও রয়েছে।

তবে দর্শক না থাকায় খেলা দেখিয়েও আনন্দ হচ্ছে না আফ্রিকা, আসাম থেকে আসা হ্যারিসন, ইউসুফ, নিকিতা, রোসলিনদের। তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘নোটের সমস্যায় দর্শক কম আসায় ভালো লাগছে না।আমাদের পরিশ্রমও মাঠে মারা যাচ্ছে।’’ একমাত্র ভরসা অবশ্য খুদেরা। নিকিতা দেখান, ফাঁকা চেয়ারের মাঝে হাতির দিকে অপলকে চেয়ে বসে আছে বছর তিনেকের ইমতিয়াজ। তাঁদের জন্যই খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন এঁরাও। আর ইমতিয়াজের মা জেসমিন বিবির জবাব, ‘‘ছেলের বায়না তাই আসতেই হল। নাহলে ছেলের মন খারাপ করবে যে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

circus demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE