Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Health Center Construction

টাকা পড়ে, কাজ থমকে শতাধিক সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) জয়রাম হেমব্রম বলেন, “নতুন করে ৩১০টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫২
Share: Save:

প্রায় তিন বছর আগে পূর্ব বর্ধমানে নতুন করে ৩১০টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর। যার পোশাকি নাম ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু এখনও অর্ধেক কেন্দ্রও গড়ে ওঠেনি। আবার যে সব ভবন তৈরি হয়েছে, সেখানে পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাকি কেন্দ্রগুলির কাজের অনুমোদন পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) জয়রাম হেমব্রম বলেন, “নতুন করে ৩১০টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ১৮৯টি ভবন তৈরির প্রশাসনিক অনুমতি পাওয়া গিয়েছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক অনুমতি পাওয়ার পরেও সব ভবনের কাজ শুরু হয়নি। এখন দেড়শোটির মতো ভবন তৈরির কাজ চলছে। বাকি ১২১টি জায়গায় ভবন তৈরির অনুমোদনের জন্য বছর খানেক আগে স্বাস্থ্যভবনে চিঠি পাঠিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তার এখনও অনুমোদন মেলেনি। জেলা পরিষদের প্রাক্তন জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূলের জেলা কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলাম বলেন, “এই সব কেন্দ্রের জন্য রাজ্য ৪০ শতাংশ টাকা দিচ্ছে। গায়ের জোরে কেন্দ্র স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও টাকা আটকে দিচ্ছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা খুব খারাপ। যে জন্য কেন্দ্রগুলি গড়ার কথা, তা ব্যাহত হচ্ছে।’’

সম্প্রতি কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অনেকগুলি বৈঠক এবং মনে করানো সত্ত্বেও আয়ুষ্মান ভারত-হেল‌্থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার ব্র্যান্ডিংয়ের নির্দেশিকা মানেনি রাজ্য। উল্টে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের ভবনগুলির রং নীল-সাদা করা হয়েছে। পাশাপাশি, আয়ুষ্মান সেন্টারের নাম ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ লেখা হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, সাতের দশকের জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রত্যন্ত এলাকায় ন্যূনতম চিকিৎসা পৌঁছে দিতে গ্রামে গ্রামে তৈরি হয়েছিল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রায় পাঁচ দশক পার করে নতুন করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সমীক্ষা করে দেখা যায়, পাঁচ হাজার জন পিছু একটি করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রয়োজন। সেই হিসেবে জেলায় নতুন করে ৩১০টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সব ক’টি কেন্দ্র গড়ার অনুমোদন পায় জেলা। কিন্তু তিন বছর কেটে যাওয়ার পরেও ১২১টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ার প্রশাসনিক অনুমতি মেলেনি। এক একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়তে ৩০-৫০ লক্ষ টাকার মতো খরচ ধরা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে জমিজট ছিল। কিন্তু তা কাটিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।

পুরনো উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকেও ধাপে ধাপে ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে’ উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল। ৫৯২টির মধ্যে ৩২২টি মতো উন্নীত হয়। বছর খানেক ধরে সেই কাজও বন্ধ। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন সূত্রে জানা যায়, ওই সব কেন্দ্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু ভবন তৈরি থেকে কেন্দ্র চালু হওয়া পর্যন্ত জিও-ট্যাগিংয়ের কাজ গত বছর এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। এ ছাড়াও কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ মোতাবেক ‘লোগো’, স্থায়ী বোর্ড লাগানোর কাজও সব জায়গায় হয়নি। বিজেপির মুখপাত্র পেশায় চিকিৎসক সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্র টাকা দেব। কিন্তু কোনও নির্দেশই মানবে না রাজ্য। সব ক্ষেত্রেই গা-জোয়ারি মনোভাবের জন্য এই পরিস্থিতি। তবে ধাপে ধাপে তৈরি হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

East Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE