Advertisement
১৫ জুন ২০২৪
Ausgram

ফাঁকা পড়ে খেত, পুজোর আগে বিসর্জনের সুর চাষির

গ্রামবাসীর দাবি, অপ্রতুল বৃষ্টির জন্য ধান রোয়ার মতো জল মেলেনি। এলাকার দু’দিকে সেচখাল গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের গ্রামের জমি উঁচু বলে সে জলও পৌঁছয়নি।

পড়ে জমি। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

পড়ে জমি। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

সৌমেন দত্ত
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:০৫
Share: Save:

ধু-ধু খেতজমির দিকে উদাস চোখে তাকিয়ে বসেছিলেন রিনা মণ্ডল। বলছিলেন, “আমন চাষই করতে পারলাম না। পুজোর আনন্দ আর কোথায়!’’ রিনার মতোই পুজোর গন্ধ পাচ্ছেন না গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ। করোনার প্রভাব কাটিয়ে দু’বছর পরে যখন নানা এলাকা পুজোয় সাজার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, আউশগ্রামের ভাল্কি পঞ্চায়েতের পঞ্চমহুলি গ্রামে তখন অনেকটাই যেন বিসর্জনের সুর।

গ্রামবাসীর দাবি, অপ্রতুল বৃষ্টির জন্য ধান রোয়ার মতো জল মেলেনি। এলাকার দু’দিকে সেচখাল গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের গ্রামের জমি উঁচু বলে সে জলও পৌঁছয়নি। ফলে, এলাকার প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমির মধ্যে মাত্র ৫০০ বিঘা জমিতে কোনও রকমে চাষ হয়েছে। খোকন ঘোড়ুই নামে এক চাষির কথায়, “চাষের আনন্দই তো আমাদের কাছে পুজোর আনন্দ। ধান গাছ তরতরিয়ে বড় হয়। তা দেখে পুজোও জমে ওঠে মানুষের মনে। পুজোর সময় নাটকে, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পাত পেড়ে খাওয়া কত কিছুই তো হত। এ বার মন খারাপ!”

জানা গেল, পঞ্চমহুলি গ্রামের একমাত্র পুজোয় অনেক অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, বিসর্জনের দিন নানা রকম বাজনা, বাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠান হয়। বিসর্জন দেখতে আরও পাঁচ গ্রামের মানুষ আসেন। পুজো কমিটির কর্তা পরেশ পাত্র বলেন, “খেতজমিতে ধান গাছের বাড় দেখে চাঁদা তোলা শুরু হয়। গ্রামের বারোয়ারিতলায় বসে চাঁদা ঠিক করা হয়। এ বছরও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু চাষই হয়নি তো কী ভাবে চাঁদা ফেলব? যাঁর যা ইচ্ছা হয়, সেটাই দেবেন।’’ তিনি জানান, সরকারি অনুদানই এ বার ভরসা। তাই বিসর্জনের আয়োজনও কম হবে। তাঁর কথায়, ‘‘বাজি পোড়ানো এ বছর সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’’

অন্য বার গ্রামের মানুষ মহালয়ার আগেই পুজোর বাজার করে ফেলতেন। এ বার গ্রামে পুজোর বাজারে ভিড় নেই বলে ব্যবসায়ীরা জানান। গ্রামের বধূ শোভা ঘোড়ুই, অনিমা কুণ্ডু, তাপসী বড়ুরা বলছিলেন, “জলের অভাবে চাষ হয়নি। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের মন ভাল নেই। হাতে টাকা নেই, বাজারে কী ভাবে যাব?”

মলিন শাড়ি পরে আলে বসে জমিতে জন্মানো নতুন ঘাসে হাত বুলিয়ে রিনা বলেন, “এখানে কত ধান হত। এখন গরু চরছে। দেবী দুর্গাপ কাছে প্রার্থনা করব, সামনের বছর যেন ভাল করে চাষ করতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ausgram Farmers Problems
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE