Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বান্ধবীর ফোন, বিয়ে ঠেকাল কিশোরীর

বিয়ে ঠিক হতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলে যাওয়া। দিন পনেরো পরেই মাধ্যমিক, তাই এক রকম জোর করেই টিউশনে যেত। নিজের অমতে বিয়ে পাকা হওয়ার কথা এক ফাঁকে গল্পের ছলে জানিয়েছিল বন্ধুকে।

সুচন্দ্রা দে
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৮
Share: Save:

বিয়ে ঠিক হতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলে যাওয়া। দিন পনেরো পরেই মাধ্যমিক, তাই এক রকম জোর করেই টিউশনে যেত। নিজের অমতে বিয়ে পাকা হওয়ার কথা এক ফাঁকে গল্পের ছলে জানিয়েছিল বন্ধুকে। সহপাঠীকে কী ভাবে ‘বিপদ’ থেকে উদ্ধার করা যায়, সে দিন থেকেই ভাবতে থাকে বন্ধু। তখনই মনে পড়ে ‘পুলিশকাকু’দের দেওয়া নম্বরের কথা। চাইল্ডলাইনের হেল্পলাইন নম্বরে (১০৯৮) ফোন করে মঙ্গলকোটের শীতলগ্রামে নাবালিকার বিয়ে আটকাল সহপাঠীরা।

সোমবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েটির বাড়িতে যান চাইল্ডলাইন ও ব্লক অফিসের কর্তারা। বুঝিয়ে-সুজিয়ে রাজি করান মেয়েটির মাকে। শেষমেশ তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। মহিলা বলেন, ‘‘পাত্রপক্ষ কোনও পণ চায়নি। তাই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। তবে এখন আর বিয়ে দিচ্ছি না।’’

মাটির বাড়িতে দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন ওই মহিলা। প্রায় ন’বছর আগে দিনমজুর স্বামীর মৃত্যুর পরে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কৈচর ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরের দশম শ্রেণিতে পড়ে বড় মেয়ে। সম্প্রতি এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন মহিলা। তাতে তাঁর আপত্তি ছিল। তাই অন্যত্র বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন। কাটোয়ার শাঁখাইঘাটে বছর পঁচিশের এক পাত্রের সঙ্গে ৪ মার্চ বিয়ে ঠিক হয়। এর পরেই মেয়েটির স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

দিন তিনেক আগে মেয়েটির এক সহপাঠীর ফোন পেয়ে চাইল্ডলাইনের কর্তারা প্রথমে স্কুলে যোগাযোগ করেন। তার পরে এ দিন তাঁরা বাড়িতে হাজির হন। নাবালিকার মা বলেন, ‘‘মেয়ে প্রেম করায় সম্মানহানির আশঙ্কায় ছিলাম। তাই বিয়ে দেওয়ার ভাবনা এসেছিল।’’

মেয়েটির সহপাঠীরা জানায়, স্কুলে প্রশাসন আয়োজিত সচেতনতা শিবিরে চাইল্ডলাইনের নম্বর দেওয়া হয়। তাতেই সুবিধে হয়েছে। এই ঘটনা ধরে শুধু মঙ্গলকোটেই গত দু’মাসে চার জন নাবালিকার বিয়ে রুখল প্রশাসন। তার মধ্যে কৈচর ষোড়শীবালা স্কুলের তিন ছাত্রী রয়েছে বলে জানান চাইল্ডলাইনের কাটোয়া শাখার কর্তা অরূপ সাহা। সম্প্রতি মঙ্গলকোটের কাশেমনগর থেকে বান্ধবীর ফোন পেয়ে এক নাবালিকার বিয়ে রুখেছিল প্রশাসন। একটি ঘটনায় আবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাবালিকাই চাইল্ডলাইনের কর্মীদের অনুরোধ করে, তাকে যেন বাড়িতে না রেখে যাওয়া হয়। তার আশঙ্কা ছিল, চাইল্ডলাইনের কর্মীরা চলে গেলেই ফের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হবে। তাকে হোমে রাখে চাইল্ডলাইন।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুদেষ্ণা সামন্ত দাঁ জানান, আঠারো বছরের আগে বিয়ে নয়, মেয়েদের নানা ভাবে তা বোঝানো হয়। শিবিরও করা হয়। ফল মিলছে। মেয়েটিকে পড়াশোনায় সাহায্যের আশ্বাসও দেন তিনি। মঙ্গলকোটের যুগ্ম বিডিও সৌমাল্য ঘোষ জানান, মেয়েটি ঠিকমতো স্কুলে যাচ্ছে কি না, খোঁজ রাখা হবে। আপাতত বিয়ে থেকে রেহাই পেয়ে নাবালিকা বলে, ‘‘ভাগ্যিস বন্ধু পাশে ছিল। এ বার পরীক্ষায় ভাল কিছু করে দেখাতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Friend Minor Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE