পুরনো ওয়েবসাইট। নিজস্ব চিত্র।
কলেজের খোঁজে সাইট-এ ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ। সেখানে টকটকে লাল অক্ষরে একদম উপর দিকেই ঘোষণা: হ্যাকারের নাম— জালিম।
গুগল সার্চে বর্ধমান রাজ কলেজ লিখলে প্রথমেই যে ওয়েবসাইটটির (www.burdwanrajcollege.net) তথ্য আসছে সেটি ‘হ্যাকড্’। সেখানে দেখা যাচ্ছে, জালিম নামে এক হ্যাকার পাকিস্তানের পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গিহানার (২০১৪-র ডিসেম্বরে) প্রতিবাদে সাইটটি ‘হ্যাক’ করেছে। ওই হামলায় নিহত পড়ুয়াদের ছবির কোলাজ এবং ভারত-বিরোধী বেশ কিছু কথা রয়েছে সেখানে। রয়েছে শিশুকণ্ঠে গান।
চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দিন পনেরো আগে নতুন ওয়েবসাইটও(www.burdwanrajcollege.ac.in) খুলে ফেলেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আগেরটি বন্ধ না হওয়ায় বিভ্রান্তি বাড়ছে পড়ুয়াদের। বিষয়টি তদন্ত করছে যারা, সেই সিআইডি-ও (সাইবার অপরাধ দমন শাখা) জানিয়ে দিয়েছে, বিধি অনুযায়ী, এ ধরনের ক্ষেত্রে নতুন সাইট খুলতে গেলে পুরনোটি বন্ধ করে দিতে হবে। একই দাবি, জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের। রাজ কলেজের টিচার-ইন-চার্জ তারকেশ্বর মণ্ডল অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওয়েবসাইটটি যে সংস্থা তৈরি করেছিল, তাদেরই বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এখনও কেন হয়নি, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
নতুন সাইট ডান দিকে। নিজস্ব চিত্র।
২২ জানুয়ারি রাতে ‘হ্যাকড’ হয় পুরনো সাইটটি। তাতে নীচের দিকে, ‘পাকিস্তান হ্যাকার্স’ এবং ‘জালিম’-এর নামোল্লেখ ছিল। জালিমের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করার ‘লিঙ্ক’-ও দেওয়া ছিল। যদিও সেটায় ‘ক্লিক’ করলে ফেসবুকের যে পাতা খুলছিল, তাতে লেখা—‘দুঃখিত, এই মুহূর্তে এই বিষয়টি উপলব্ধ নয়’। সে রাতে কিছু পড়ুয়া সাইটের ওই দশা দেখে কলেজ কতৃর্পক্ষকে জানান। পরদিন তারকেশ্বরবাবু বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ২৪ জানুয়ারি জেলা পুলিশ সিআইডি-কে তদন্তভার দেয়। তার পরে পেশোয়ারে বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে আর একটি জঙ্গি হামলা হয়ে গিয়েছে। নতুন ওয়েবসাইট খুলেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুরনোটি রয়েছে (মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত) যথাপূর্বম অবস্থাতেই। এতেই বিভ্রান্তি বাড়ছে বলে দাবি তুলেছেন পড়ুয়ারা।
কলেজের ছাত্রী দ্বিতীয় বর্ষের দ্যুতি সাহা, তৃতীয় বর্ষের সায়ন্তন দত্তেরা বলেন, “একটা হ্যাক হওয়া সাইট তিন মাস ধরে চালু রয়েছে দেখে অবাক লাগছে। কর্তৃপক্ষের এখনই ওটা বন্ধ করা উচিত। যে বহিরাগতেরা আমাদের কলেজ নিয়ে জানতে আগ্রহী, তাঁরা কী ভাববেন?”
কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক রাহুল সিংহের দাবি, “কয়েকদিন আগেই টিচার-ইন-চার্জের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এখনও কেন পুরনো সাইটটি চালু রাখা হয়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, কারা এই কাজ করেছে, তা জানার চেষ্টা করছেন প্রযুক্তিবিদেরা। সে জন্যই সাইটটি চালু রয়েছে। কিন্তু কলেজের নতুন সাইট চালু হওয়ার পরে আরও বেশি করে বিভ্রান্তি হচ্ছে, এটা অস্বীকার করা যায় না।”
সিআইডি-র বক্তব্য, তদন্তের স্বার্থে ‘হ্যাক’ হওয়া ওয়েবসাইটটি খোলা রাখা যেতে পারে, কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন ওয়েবসাইট খুললে পুরনোটি বন্ধ করে দেওয়াটাই নিয়ম। রাজ্যে গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তা জানান, ‘হ্যাকার’দের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তদন্ত চলছে।
(সহ প্রতিবেদন: শিবাজী দে সরকার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy