Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
flood

Flood: ‘দেবী লক্ষ্মীকে বসাব কোথায়?’

বাড়িঘর থাকার উপযুক্ত না থাকায় কয়েকটি পরিবার স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এবং বাকিরা ভিটের কাছাকাছি ত্রিপলের তাঁবু করে বাস করতে শুরু করেন।

ঘরকন্না: বন্যায় ঘর হারিয়ে তাঁবুর নীচেই অনেকের সংসার।

ঘরকন্না: বন্যায় ঘর হারিয়ে তাঁবুর নীচেই অনেকের সংসার। নিজস্ব চিত্র।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৩৩
Share: Save:

অজয় নদের বন্যায় ভেঙেছে বাড়িঘর। ভেসেছে ভিটে। খেতের ফসল বালি চাপা পড়ে নষ্ট হয়েছে। অনেকে এখনও তাঁবুর নীচে কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। এ বার তাই পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের ভেদিয়ার সাঁতলার বানভাসি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই লক্ষ্মীর আরাধনা হচ্ছে না। দু’-একটি পরিবার কোনও রকমে পুজো সারছেন। গ্রামের প্রধান উৎসব লক্ষ্মীপুজো ঘিরে তাই বিষাদের ছায়া।

দুর্গাপুজোর আগে টানা বৃষ্টিতে অজয়ের জলে প্লাবিত হয় আউশগ্রামের ভেদিয়া পঞ্চায়েতের সাঁতলা গ্রাম। ৪৪টি পরিবারের অধিকাংশের বাড়ি ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বিঘার পরে বিঘা জমির আনাজ ও ধান বালি চাপা পড়ে যায়। সকলে আশ্রয় নেন অজয়ের বাঁধে। জল সরতে গ্রামে ফিরে বাড়িঘর থাকার উপযুক্ত না থাকায় কয়েকটি পরিবার স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এবং বাকিরা ভিটের কাছাকাছি ত্রিপলের তাঁবু করে বাস করতে শুরু করেন।

বাসিন্দারা জানান,সাঁতলায় দুর্গাপুজো হয় না। গ্রামের প্রধান উৎসব লক্ষ্মীপুজো। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করা হয়। এই উপলক্ষে আত্মীয়েরা আসেন। সারা গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে। কিন্তু এ বার অজয়ের জল গ্রামের আনন্দ ধুয়ে নিয়ে গিয়েছে।

ত্রিপলের তাঁবুতে বসে স্থানীয় বাসিন্দা বছর সত্তরের গীতা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের বাস্তুভিটে ধুয়েমুছে সাফ। কোথায় দেবী লক্ষ্মীকে বসাব? চাষের উপরেই আমাদের সব কিছু নির্ভর। জমির পাকা ধান বালিতে চাপা পড়ে আছে। আমরা সব হারিয়েছি।’’ বৃদ্ধার আক্ষেপ, ‘‘আমাদের গ্রামে ঘরে-ঘরে সিংহাসনে লক্ষ্মী প্রতিমা বসিয়ে পুজো হত। জমি থেকে পাকা ধানের শিষ এনে প্রতিমার হাতে ধরিয়ে দিতাম। অন্য বছর এ সময়ে উলুধ্বনি, শাঁখের আওয়াজে সারা গ্রামে উৎসবের চেহারা নিত। কত আনন্দ। এ বার শুধুই হা-হুতাশ।’’ তাঁবুর তলায় থাকা আর এক বধূ বছর বিয়াল্লিশের সরস্বতী মণ্ডল জানান, বিয়ের পর থেকে তিনি বাড়িতে ধুমধামের সঙ্গে লক্ষ্মীপুজো দেখে আসছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমিও ভোগ রান্না থেকে পুজোর আয়োজন করি। এ বার বন্যায় মাঠের ফসল শেষ। চাষের উপরেই আমাদের রুজি রোজগার। নিজেদের ভিটেতেও থাকতে পারছি না। তাই এ বার পুজোয় ছেদ পড়ল। মনটা ভাল নেই।’’ আর এক বধূ শ্যামলী জোয়ারদার জানান, সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থার সাহায্যই এখন তাঁদের সংসার কোনও মতে চলছে। এই অবস্থায় লক্ষ্মীপুজো করার কথা ভাবতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণ সরকার বলেন, ‘‘এখনও অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে কয়েকটি পরিবার ঠাসাঠাসি করে বাস করছি। কবে বাড়ি ফিরব জানি না!’’ সৌরভ জোয়ারদার জানান, বাড়িটা বেঁচে যাওয়ায় এ বার তাঁরা ঘটেই দেবীর পুজো করছেন। কিন্তু মন ভাল নেই। গ্রামবাসীর একাংশ জানান, সব কিছু গুছিয়ে উঠতে পারলে সামনের রাস পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন করবেন অনেকে।

বিডিও (আউশগ্রাম ২) গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১০০ দিনের প্রকল্পে বাড়ি ও জমি থেকে বালি সরানো শুরু হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

flood laxmi puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE