সুতোয়-ফোঁড়: নকশি-কাঁথায় শিল্পের টান। নিজস্ব চিত্র
এই কাঁথা-শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুই বাংলারই সাংস্কৃতিক জীবনের বহু ছবি। জসীমউদ্দিন তাঁর কাব্যে এই শিল্পকে অমর রেখেছেন। কিন্তু সেই ঐতিহ্যের নকশি-কাঁথার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্তমানে প্রায় নেই বলে দাবি বুদবুদ, কাঁকসার শিল্পীদের। দিন গুজরান ও এই শিল্পকে বাঁচাতে তাঁরা সরকারি সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, বুদবুদের কাঁকড়া, কৌচা, কাঁকসার সাতকাহনিয়া, অযোধ্যার মতো বিভিন্ন গ্রামে আগে বহু মহিলা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বুদবুদের কাঁকড়া গ্রামের মাহুমা বিবি জানান, একটি নকশা করা কাঁথার দাম দু’ থেকে আড়াই হাজার টাকার মতো। বছরে ১০টির মতো কাঁথার বরাত মিলত এক সময়ে। এক সময় এলাকায় কারও বিয়ে হলেই এই ধরনের কাঁথা তৈরির বরাত মিলত। এখন একটারও বরাত মেলে না। কেন? শিল্পীরা জানান, বাজারে যন্ত্রের তৈরি কাঁথার দাম অনেক কম। তাই তা কিনতেই ক্রেতার আগ্রহ বেশি।
কাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দা নাজমা বেগম, রাজিয়া বেগমরা নিজেদের দরকারে তৈরি করছেন নকশি কাঁথা। তাঁদেরও আক্ষেপ, ‘‘এখন বরাত মেলে না। ফলে কাঁথা তৈরি করে উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া এই শিল্পকে বাঁচানো যাবে না।’’ এই পরিস্থিতিতে দিন গুজরান করতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান শিল্পীরা। অথচ এক-একটি কাঁথা বুনতে এক মাসের কাছাকাছি সময় লাগে।
অথচ এই ধরনের কাঁথার এক সময় দুই বাংলাতেই ভাল কদর ছিল। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, রাজশাহি, ফরিদপুর ও যশোহর-সহ নানা জায়গার নকশি কাঁথার জাঁকজমক এক সময় ছিল নজরকাড়া। ভাল কদর ছিল বুদবুদ ও কাঁকসার গ্রামের শিল্পীদের তৈরি
নকশি-কাঁথারও।
সম্প্রতি বুদবুদের বাসিন্দা মহম্মদ আকবর নামে এক ব্যক্তি আত্মীয়ের বিয়েতে নকশি-কাঁথা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘এই শিল্পকে বাঁচাতে গেলে ক্রেতাদের সামনে ভাল ভাবে প্রচার করা দরকার সরকারের।’’ রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘গ্রাম বাংলার এটি একটি বড় কুটিরশিল্প। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy