Advertisement
০২ জুন ২০২৪
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়

খোঁজ নেই কমলকুমারের আঁকা ছবির, রিপোর্ট

সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদারের শতবর্ষে তাঁর আঁকা ৪০টি ছবি হারিয়ে ফেলল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। ছবিগুলি খোঁজার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে সাফ জানিয়েও দিয়েছে সে কথা। ২০০৬ সালে ওই ৪০টি ছবি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন বর্ধমানেরই আর এক কবি সুব্রত চক্রবর্তীর স্ত্রী মালাদেবী। তৎকালীন উপাচার্য অমিতকুমার মল্লিকের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অফিসার তারককুমার সরকার ছবিগুলি আনুষ্ঠানিক ভাবে সংগ্রহও করেন। ঠিক হয়, আকাঁ ছবিগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৭
Share: Save:

সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদারের শতবর্ষে তাঁর আঁকা ৪০টি ছবি হারিয়ে ফেলল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। ছবিগুলি খোঁজার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে সাফ জানিয়েও দিয়েছে সে কথা।

২০০৬ সালে ওই ৪০টি ছবি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন বর্ধমানেরই আর এক কবি সুব্রত চক্রবর্তীর স্ত্রী মালাদেবী। তৎকালীন উপাচার্য অমিতকুমার মল্লিকের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অফিসার তারককুমার সরকার ছবিগুলি আনুষ্ঠানিক ভাবে সংগ্রহও করেন। ঠিক হয়, আকাঁ ছবিগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তারপর আট বছর পার হয়ে গেলেও ছবিগুলির দেখভালের কোনও উদ্যোগ করেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছবিগুলি কোথায়, কী ভাবে রয়েছে তার হদিশও রাখেনি। পরে কমলকুমারের শতবর্ষে ছবিগুলি খুঁজতে উদ্যোগী হয় বিশ্ববিদ্যালয়। পরপর দুটি কমিটি গড়া হয়। রেজিস্ট্রারের ঘরে বৈঠকের পরে ছবিগুলি খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রন্থাগারিক কাঞ্চন কামিল্যকে। তার কয়েক মাস পরে রিপোর্ট পেশ করে কাঞ্চনবাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে অনেক খুঁজেও ছবিগুলির সন্ধান মেলেনি। তাঁর দাবি, “আমরা লাইব্রেরিতে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ছবিগুলির হদিশ পাইনি। তাই ছবিগুলিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, এমনই রিপোর্ট পেশ করে দিয়েছি।”

ছবিগুলি বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবরে রীতিমতো হতাশ মালাদেবীর আক্ষেপ, “ওদের হাতে ছবিগুলি দেওয়াই উচিত হয়নি। ভেবেছিলাম, ছবিগুলি যেহেতু আমার স্বামীর কাছে ছিল, তাই ওগুলো আমাদের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা গেলে মাঝেমাঝে দেখতে পাব। এখন তো মনে হচ্ছে, ছবিগুলো কমলবাবুর স্ত্রী দয়াময়ীদেবীকে দিয়ে দিলেই হতো। বড় ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের হেফাজতে থাকা ছবিগুলির সন্ধান অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই মিলছিল না। এমনকী একটা সময়ে তারকবাবু, অমিতবাবুরা অবসর নেওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির আধিকারিক বলতে শুরু করেন, ছবিগুলি সম্পর্কে তাঁদের কিছুই জানা নেই। শেষে জুলাই মাসে বর্ধমানের এক সাহিত্য পত্রিকা ‘আলোবাতাস’-এর কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের সঙ্গে দেখা করে ছবিগুলি সম্পর্কে প্রকাশিত খবর ও অন্যান্য নথি পেশ করে দাবি তোলেন, ছবিগুলি খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। উপাচার্যের নির্দেশে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামের কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা প্রাথমিক ভাবে খোঁজ শুরু করেন। তিনি জানান, সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে ছবিগুলি যে বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিল, তার প্রমাণ মিলেছে। তবে তারপরেই আচমকা তাঁকে অন্ধকারে রেখে ছবিগুলি খোঁজার দায়িত্ব গ্রন্থাগারিককে দেওয়া হয় বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ কর্মীর অভিযোগ। উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “আমাদের লোকজন ছবিগুলি খুঁজেছিলেন। কিন্তু গ্রন্থাগারে সেগুলি পাওয়া যায়নি।” তাঁর আরও দাবি, “মনে হচ্ছে তেমন আন্তরিকতা নিয়ে ছবিগুলি হয়তো খোঁজা হয়নি। আবার কেউ ছবিগুলি পাচার করে দিয়েছেন এমনটাও হতে পারে।” ফের ছবিগুলি খোঁজা হবে কি না তারও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি উপাচার্য। তিনি বলেন, “দেখতে হবে।”

যাঁর আমলে ওই ছবিগুলি বিশ্ববিদ্যালয় দান হিসেবে পেয়েছিল সেই অমিতকুমার মল্লিক এর আগে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে ছবিগুলি সম্ভবত উপাচার্যের দফতরেই রাখা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের অবশ্য খবর, অমিতবাবুর সঙ্গে তদন্তকারী কমিটির কেউই কথা বলেননি। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “আমি নিজে অমিতবাবুর সঙ্গে কথা বলিনি। কিন্তু যাঁদের ছবিগুলি খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছিলাম তাঁরা কেন কথা বলেননি, বুঝতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE