Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Peacock Number Increased

দুই জঙ্গলে বেড়েছে ময়ূরের সংখ্যা, ভাবনা গণনারও

কিন্তু কেন বাড়ছে ময়ূরের সংখ্যা, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে বন্যপ্রেমীদের মধ্যে। বন দফতর সূত্রে তিনটি কারণের কথা প্রাথমিক ভাবে বলা হচ্ছে।

দেউল এলাকায়।

দেউল এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

বিপ্লব ভট্টাচার্য
কাঁকসা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:১০
Share: Save:

গত কয়েক বছরে বন দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের পানাগড় ও দুর্গাপুর রেঞ্জে অন্য বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সঙ্গে ময়ূরের সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেড়েছে বলে পর্যবেক্ষণ বনকর্তাদের। এর নেপথ্যে তিনটি কারণ রয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। নির্দিষ্ট করে ময়ূরের সংখ্যা কত বেড়েছে, তা বন দফতর বলতে পারেনি। তবে ময়ূর-গণনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানা গিয়েছে।

বন দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের এডিএফও সোমনাথ চৌধুরী শুক্রবার বলেন, “জঙ্গলে বন্যপ্রাণী, বিশেষত ময়ূরের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে এলাকাবাসী তা দেখতেও পাচ্ছেন। আগামী দিনে ময়ূরের গণনা করা যায় কি না, তা দেখা হবে।” এই পরিস্থিতিতে বন দফতরের বক্তব্য, দু’টি রেঞ্জে আনুমানিক পাঁচশোরও বেশি ময়ূর এই মুহূর্তে রয়েছে।

কিন্তু কী করে বোঝা যাচ্ছে, ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে? বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পানাগড় ও দুর্গাপুর রেঞ্জে বনাঞ্চলের পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় পাঁচ হাজার ও সাড়ে সাত হাজার হেক্টর। দুর্গাপুরের রেঞ্জার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দুর্গাপুর রেঞ্জের দেউলে ময়ূর ও হরিণ সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭-এ দেউলে ৩০টি ময়ূর ছাড়া হয়েছিল। ফলে, এখানে আগেও ময়ূর দেখা যেত। তবে, তা দেখা যেত জঙ্গল লাগোয়া গৌরাঙ্গপুর, খেরোবাড়ির মতো কয়েকটি গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বছর তিন-চার আগেও সপ্তাহে হয়তো একটি করে ময়ূরের দেখা মিলত। এখন সেটাই প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে। এ দিকে, পানাগড় রেঞ্জে সে ভাবে ময়ূরের দেখাই মিলত না। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে লবনধার, আদুরিয়া, অমরপুরে বিভিন্ন গ্রামের পুকুরে ময়ূর ঘুরতে দেখেছেন এলাকাবাসী। পানাগড়ের রেঞ্জার সুভাষচন্দ্র পালও জানাচ্ছেন, প্রায়ই বিভিন্ন গ্রামে ময়ূরের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই ময়ূর দেউল, বীরভূম, ঝাড়খণ্ড থেকে এই জঙ্গলে এসে থাকতে পারে বলেও অনুমান।

কিন্তু কেন বাড়ছে ময়ূরের সংখ্যা, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে বন্যপ্রেমীদের মধ্যে। বন দফতর সূত্রে তিনটি কারণের কথা প্রাথমিক ভাবে বলা হচ্ছে। প্রথমত, ময়ূরের বংশবৃদ্ধি পানাগড় রেঞ্জে যে ঘটে, তার প্রমাণ গত কয়েক বছর আগে পর্যন্তও পাওয়া যায়নি। কিন্তু বর্তমানে ওই জঙ্গলে সে পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেই অনুমান। বছরখানেক আগে পানাগড় রেঞ্জের জঙ্গল থেকে ময়ূরের ডিমও উদ্ধার করে বন দফতর। দ্বিতীয়ত, ময়ূরের প্রধান খাবার হল সাপ। এই দুই জঙ্গলে সাপের সংখ্যাও অনেকটাই বেড়েছে বলে পর্যবেক্ষণ বনকর্তাদের। ফলে, খাবারের অভাব হচ্ছে না। সে সঙ্গে, বেড়েছে জন-সচেতনতাও। বন দফতরের দাবি, লাগাতার নজরদারির ফলে, চোরাশিকারিদের উৎপাতেও অনেকটাই লাগাম পরানো গিয়েছে।

এ দিকে, পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদের লবনধার গ্রামের বাসিন্দা অর্ণব ঘোষ জঙ্গল সম্পর্কে এলাকাবাসীকে সচেতন করার লক্ষ্যে একটি সংস্থা চালান। তিনি সতর্ক করছেন, “ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে, ভাল কথা। কিন্তু জঙ্গলে আগুন লাগানো থেকে মানুষকে বিরত থাকতেই হবে। তা না হলে, ময়ূর-সহ অন্য বনপ্রাণীদের
ক্ষতি হতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanksa Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE