নির্মীয়মাণ উড়ালপুল। ছবি: পাপন চৌধুরী।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি আসানসোলে কুমারপুর উড়ালপুল নির্মাণের কাজ। তৎপরতার সঙ্গে যন্ত্রাংশ খোঁজ করে যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণকাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, আগামি অর্থবর্ষের মধ্যে কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে উড়ালপুল তৈরি না হওয়া নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিঁধেছে তৃণমূল। ভোটের মুখে এ নিয়ে তাতছে শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে তৈরি হওয়ার কথা ছিল এই লেভেল ক্রসিংয়ের উড়ালপুলটির। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষেও যে সেটি তৈরির কাজ শেষ হচ্ছে না, শনিবার তা জানান পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন কর্তৃপক্ষ। এ দিন ডিআরএম চেতনানন্দ সিংহ বলেন, ‘‘সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দেরি হচ্ছে। যন্ত্রাংশের খোঁজ চলছে। তা পেলেই দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।’’ কী ধরনের যন্ত্রাংশ পেতে সমস্যা হচ্ছে, সে প্রশ্নে ডিআরএম জানান, সেতুর নকশার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিশেষ এক ধরনের যন্ত্র প্রয়োজন। একাধিক সংস্থার কাছে সেটির খোঁজ করা হলেও মিলছে না। তবে শীঘ্রই সেগুলি পাওয়া যাবে বলে ডিআরএমের আশা। তিনি বলেন, ‘‘আগামী অর্থবর্ষের গোড়াতেই উড়ালপুলের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।’’
২০১৪ লোকসভা ভোটে জিতে আসানসোলের তৎকালীন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় রেল মন্ত্রক থেকে কুমারপুরে উড়ালপুলটি তৈরির অনুমোদন নিয়ে আসেন। ২০১৬ সালের ২২ মে সেতু নির্মাণের শিলান্যাস করেন বাবুল। তখন রেলের তরফে দাবি করা হয়েছিল, ১৮ মাসের মধ্যে সেতু তৈরি হয়ে যাবে। জানা যায়, প্রায় ৬৩১ মিটার লম্বা সেতুটি তৈরির খরচ ধরা হয় ৫৪ কোটি টাকা। তার পরে দামোদর দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পরে বাবুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। উপনির্বাচনে জিতে আসানসোলের সাংসদ হয়েছেন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। আরও একটি লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কুমারপুর উড়ালপুলের নির্মাণ এখনও শেষ হয়নি।
শিল্পাঞ্চলে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ পথ আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত এই জিটি রোড। জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিত্য দিন এই রাস্তায় প্রায় ৫০ হাজার যানবাহন চলে, লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। পার্শ্ববর্তী জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া-সহ লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খণ্ডের একাধিক এলাকার বাসিন্দারা এই রাস্তা ব্যবহার
করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত সংস্থা ইস্কোর পণ্য পরিবহণের জন্য রেলের আসানসোল ডিভিশনের বরাচক স্টেশন থেকে ইস্কো কারখানা
পর্যন্ত রেলপথ ওই জিটি রোডের উপর দিয়ে যাওয়ায় কুমারপুরে লেভেল ক্রসিং তৈরি করা হয়। দিনের ব্যস্ত সময়ে তা বন্ধ থাকলে সাধারণ যাত্রীরা তো বটেই, আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স, দমকলের গাড়ি বা পড়ুয়া বোঝাই পুলকারও। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কুমারপুরে উড়ালপুলের দাবি অনেক দিনের।
কাজ শুরুর সাত বছরের মাথাতেও উড়ালপুল না হওয়ায় বিজেপিকে দুষছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ব্যস্ত শহরে ওই সেতু তৈরিতে বিজেপি সরকারের সাত বছর সময় লাগল। পশ্চিমবঙ্গের কেমন উন্নতি ওরা চায়, এতেই পরিষ্কার। এর পরে ভোটের মুখে অর্ধসমাপ্ত সেতুটির তড়িঘড়ি উদ্বোধন করে হয়তো কৃতিত্ব দাবি করবে।’’ বিজেপি নেত্রী তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের পাল্টা দাবি, ‘‘অনেক সরকারই তো গত ৭৫ বছরে এসেছে-গিয়েছে। উড়ালপুল তৈরির কথা কেউ ভাবেনি। বিজেপির সরকারই তা তৈরি করছে। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন কে করছে, বলে দিতে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy