রানিগঞ্জের সিহারসোলে রাজবাড়ি মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছিল ২০০৯-এ। তার পরে দামোদরে বহু জল গড়িয়েছে। অবশেষে মঙ্গলবার রানিগঞ্জের প্রশাসনিক জনসভা থেকে ধস কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশকে নতুন আবাসনের চাবি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে জেলার রাজনীতি ও সমাজ-জীবনে ফের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘প্রায় তিন দশক ধরে রানিগঞ্জে ধসের সমস্যা। কেউ খেয়াল করেননি। আমরাই পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছি। ২৯ হাজার বাড়ি তৈরি করা হবে। প্রথম ধাপে, অণ্ডাল, জামুড়িয়া, বারাবনির প্রায় ৯,২৩২ জন নতুন বাড়ি পাচ্ছেন। মঙ্গলবার প্রায় ৩,৫৮৪ জন বাড়ি পেলেন। বাকিরাও দ্রুত পাবেন।’’ সেই সঙ্গে এই পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ ‘ঝড়ের গতি’-তে করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসনকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল, রানিগঞ্জ খনি এলাকায় ১৪৬টি ধস কবলিত এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩৯টি জনবসতি এলাকা এবং বাকি সাতটি
এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে রেললাইন, সড়কপথ ও খনিজ তেলের পাইপলাইন। প্রাথমিক ভাবে বারাবনির দাসকেয়ারি ও জামুড়িয়ার বিজয়নগরে প্রায় ১৫ হাজার আবাসন তৈরি হচ্ছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে বাড়ির চাবি পেয়ে খুশি, পেশায় প্রাক্তন ইসিএল কর্মী অশীতিপর বৃদ্ধ সুরেশ নুনিয়া। তিনি বলেন, ‘‘শ্রীপুরে বাড়ি। এলাকায় পরপর ধস নামায় শ্রীপুরের ছাতিমডাঙায় ইসিএল-এর একটি পরিত্যক্ত হাসপাতালের অস্থায়ী শিবিরে সপরিবার থাকছিলাম। এ দিন নতুন ছাদ পেয়ে খুবই ভাল লাগছে।’’ একই কথা বলেন ছাতিমডাঙার অস্থায়ী শিবিরের বাসিন্দা পদ্মাদেবী বাউড়িও।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ‘আমরাই পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছি’, এই অংশটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সিপিএম। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী জানান, প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দাকে পুনর্বাসন দেওয়ার দাবিটি প্রথম তুলেছিলেন আসানসোলের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায়। ডিরেক্টর জেনারেল মাইনস সেফটি (ডিজিএমএস) ১৯৯৭-এর ১৩ জুন ধস কবলিত অঞ্চলের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এর মাসখানেক পরে, পুনর্বাসনের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন হারাধনবাবু। এর প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১৯৯৯-এ ইসিএল পুনর্বাসন সংক্রান্ত একটি মাস্টার প্ল্যান বানিয়ে আদালতে জমা করলেও আপত্তি তোলেন হারাধনবাবু। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি তৎকালীন সলিসিটর জেনারেলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেন। ২০০৩-এ ইসিএল ফের একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ বানিয়ে আদালতে জমা করে। ফের ওই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপত্তি করা হলে ২০০৬-এ নতুন ‘মাস্টার প্ল্যান’ বানিয়ে আদালতে জমা করা হয়। তা সব পক্ষই গ্রহণ করে। ২০০৯-এর জুনে ওই প্ল্যানকে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট। পরিকল্পনা রূপায়ণের খরচ বাবদ প্রায় ২,৬২৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করে কয়লা মন্ত্রক। প্ল্যানে বলা হয়েছিল, দু’টি পর্যায়ে দশ বছরের মধ্যে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে।
ইসিএল ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইসিএল-এর আবাসন এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের সব দায়িত্ব পালন করবে সংস্থা। ব্যক্তিগত এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য জমি ও পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। অর্থ জোগাবে কয়লা মন্ত্রক। সেই মতো ব্যক্তিগত এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের প্রাথমিক দায়িত্ব হাতে নেয় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার আসার পরে, আবাসন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজ্য আবাসন দফতরকে। মঙ্গলবার সেই আবাসন বণ্টনের প্রক্রিয়াই শুরু হল। পাশাপাশি, এডিডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই প্রকল্প দিনের আলো দেখেছে। তাই বলাই চলে, আমরাই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy