Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Death

‘গাফিলতিতে’ মৃত্যু, অভিযোগ ভাঙচুরেরও

কর্তব্যরত চিকিৎসক সোমনাথের বক্তব্য, “নিয়ম মতো চিকিৎসা করা হয়েছে। গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়।”

আসানসোল জেলা হাসপাতাল চত্বরে। সোমবার রাতে।

আসানসোল জেলা হাসপাতাল চত্বরে। সোমবার রাতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২ ০৬:৪২
Share: Save:

অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতিতে তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আর সে অভিযোগকে কেন্দ্র করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভাঙচুর, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের হেনস্থার চেষ্টা, তাঁদের অন্তত চারটি স্কুটার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ‘এক দল লোকের’ বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তেতে উঠল আসানসোল জেলা হাসপাতাল চত্বর। মঙ্গলবার পর্যন্ত অবশ্য কোথাও গাফিলতিতে মৃত্যুর লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। ভাঙচুরে অভিযুক্তদের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সোমবার দুপুর ১টা ১০-এ চিকিৎসক সোমনাথ গুপ্তের অধীনে ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন, পেশায় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালক, বুধার বাউড়িপাড়ার বাসিন্দা কাঞ্চন বাউড়ি (২১)। বিকেলের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, রোগীর বাড়ির সদস্যদের ডেকে সে কথা জানিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তার মধ্যেই রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায়, তাঁকে সিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করানো হয়। রাত সাড়ে ১০টায় সেখানেই কাঞ্চনের মৃত্যু হয়।

কাঞ্চনের বাবা সূর্যের সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি, তাঁর ছেলেকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। পরে, তা খুলে নেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, “পরে বার বার অনুরোধ করা হলেও স্যালাইন দেওয়া হয়নি। ছেলেকে কোনও চিকিৎসক পরীক্ষাও করেননি। গাফিলতির কারণেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে।” যদিও, কর্তব্যরত চিকিৎসক সোমনাথের বক্তব্য, “নিয়ম মতো চিকিৎসা করা হয়েছে। গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়।”

এ দিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রাত প্রায় পৌনে ১২টায় আচমকা প্রায় ৫০ জনের একটি দল বহির্বিভাগে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। চলতে থাকে ভাঙচুর। নার্স ও চিকিৎসকদের চারটি স্কুটার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দরজা, জানলার কাচ, চেয়ার-টেবিল, রোগীদের বসার জন্য থাকা চেয়ার উল্টে দেওয়া হয়। ‘হেনস্থা’ করা হয় হাসপাতালের রক্ষীদেরও। অভিযোগ, ওয়ার্ডের বাইরে থাকা কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদেরও হেনস্থার চেষ্টা করা হয়। সে সময়ে, রক্ষীরা নার্স ও চিকিৎসকদের দ্রুত ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে এই পরিস্থিতি চলে। পরে, আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতির সামাল দেয়।

পাশাপাশি, হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস দাবি করেছেন, “প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, ওই রোগীর অগ্ন্যাশয়ে গুরুতর সমস্যা ছিল। সে জন্য তাঁর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়। পরিবারকে তা জানানোও হয়। চিকিৎসায় গাফিলতি হয়নি। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পরিবার গাফিলতির লিখিত অভিযোগ জানায়নি।” কেন লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি, সে বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি মৃতের বাবা সূর্যের।

এ দিকে, আসানসোল দক্ষিণ থানা জানিয়েছে, হাসপাতালে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ় খতিয়ে দেখে ‘হামলাকারীদের’ চিহ্নিত করার কাজ চলছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আসানসোল জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের সুপার জানান, সোমবারের রাতের ঘটনার পরে, আতঙ্কে রয়েছেন নার্স ও চিকিৎসকেরা। মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়েও দেখা গিয়েছে, সর্বত্রই আতঙ্কের পরিবেশ। হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের চিকিৎসক সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমন হলে মন দিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।” পাশাপাশি, চিকিৎসকদের একাংশের মতে, হাসপাতালকে বদনাম করতে কোনও স্বার্থান্বেষী চক্রও এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে, এ বিষয়ে বিশদে কিছু বলেননি তাঁরা। পাশাপাশি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য রোগীদের পরিজনদের একাংশ বলেন, “হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। আতঙ্কে রয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Vandalism Asansol District Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE