সেতুতে ওঠার রাস্তা তৈরির কাজ চলছে বর্ধমানে। ছবি: উদিত সিংহ
কবে শেষ হবে সেতুর কাজ, যাতায়াতের ফাঁকে এই প্রশ্নটা প্রায়শই করেন কোনও না কোনও যাত্রী। ঝুঁকি নিয়ে আর কত দিন চলতে হবে বা সেতু তৈরির পরেও যানজট থেকে মুক্তি মিলবে কি না, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীরা সকলেই এর উত্তর খুঁজছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষের কাছেই এখনও পর্যন্ত এ সবের নির্দিষ্ট কোনও জবাব নেই।
রেল ও পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর পুজোর সময়ে বর্ধমানে নতুন রেলসেতু খুলে দেওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। তা পিছিয়ে নভেম্বরে খোলার দিন ঠিক হয়। সেই সময়সীমাও রাখতে পারেনি সেতু তৈরির জন্য গঠিত রেল-রাজ্যের যৌথ সংস্থা ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড’ (আরভিএনএল)। তার পরে ঠিক হয়, এপ্রিল-মে মাসে সেতুর কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পূর্ত দফতর থেকে প্রশাসনের কর্তাদের এখন ধারণা, কাজের যা গতি তাতে সেই সময়ের মধ্যেও সেতুর কাজ শেষ করা যাবে না।
২৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মূল অংশ প্রায় দু’বছর আগে তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সংযোগকারী রাস্তা তৈরির বড় অংশের কাজ এখনও বাকি। বারবার সময়সীমা পিছিয়ে যাওয়ার পরে আরভিএনএলের এক সহকারী ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, “কবে শেষ হবে, বলতে পারছি না।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা দাবি করেন, “কাজের যা গতি, তাতে হয়তো সংযোগকারী রাস্তা তৈরি শেষ করে হয়তো পুজোর মুখে সেতু চালু হবে। তবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা ঠিক হবে না।” জানা গিয়েছে, জেলাশাসকের বাংলোর দিকে সংযোগকারী রাস্তা তৈরির কাজ কার্যত কিছুই হয়নি। তবে নবাবহাট বা পুরভবনের দিকে সংযোগকারী রাস্তার কাজ চলছে। কাটোয়া রোডের উপরে কাজ কিছুটা থমকে রয়েছে।
আরভিএনএল সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর পর্যন্ত সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য ১৮ শতক জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মধ্যে জেলাশাসকের বাংলোর কাছে দেড় শতক জায়গা এখনও হাতে আসেনি। জমি-জটের জন্যই বারবার সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি কর্তাদের। তাঁদের আশা, মার্চের গোড়াতেই আটকে থাকা জমি প্রশাসনের হাতে চলে আসবে।
সেপ্টেম্বরে কাজ শেষের পরেও কি যানজট থেকে মুক্তি মিলবে? এটাও বড় প্রশ্ন বলে প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন। তাঁরা জানান, উল্লাস থেকে পারবীরহাটা ও পঞ্জাবি পাড়া মোড় থেকে নবাবহাট পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকা খরচ করে জিটি রোড সংস্কার হচ্ছে। রেলসেতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাস্তাও চার লেনের করা হচ্ছে। কিন্তু পারবীরহাটা থেকে পুরভবনের মুখে রেলসেতুতে ওঠা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা সেই দু’লেনেরই থাকছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আশঙ্কা, “পুরোটাই একটা ফানেলের মত চেহারা নেবে। কার্জন গেট চত্বর আরও জটের ফাঁসে পড়বে।”
পূর্ত দফতরের অবশ্য আশ্বাস, রেলসেতু খুলে গেলেই দ্বিতীয় পর্যায়ে বীরহাটা থেকে স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা চওড়ার কাজে হাত দেওয়া হবে। তবে সব জায়গায় চওড়া করা যাবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। সে জন্যই জেলা প্রশাসন ওই দু’কিলোমিটার রাস্তায় উড়ালপুল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না, সে নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
ফলে, সেতু তৈরির পরেও যানজট থেকে মুক্তি মিলবে কি না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি।” (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy