শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে আতসবাজি থেকে।
গত বছর কালীপুজোর পরের দিনই বছর দশেকের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়েছিল বিশ্বজিৎ মিত্রকে। শ্বাস-প্রশ্বাসে বেশ সমস্যা হচ্ছিল ছেলের। আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক সৈকতকুমার বসু পরীক্ষা করে জানান, শ্বাসনালীতে সংক্রমণ হয়েছে ছেলেটির। আতসবাজির ধোঁয়াই এর কারণ বলে জানান তিনি। কয়েক দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয় ওই বালক, জানান চিকিৎসক সৈকতবাবু।
প্রতি বছরই দীপাবলির পরপর এই রকম সংক্রমণ নিয়ে অনেকে হাসপাতালে আসেন বলে জানান চিকিৎসকেরা। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, এত রোগী আসেন যে সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়। পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও নিষেধাজ্ঞা, প্রচার ও সচেতনতার ফলে শব্দবাজির দাপট আগের থেকে কমেছে। কিন্তু আতসবাজির ধোঁয়াও কম ক্ষতিকর নয়, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
পরিবেশকর্মীরা জানান, আতসবাজির লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, গন্ধক, ক্যাডমিয়াম-সহ নানা রাসায়নিকের গুঁড়ো আগুনে পুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরি করে। তা বাতাসে ভাসমান ধুলিকণার সঙ্গে মিশে কান, নাক, গলা, শ্বাসনালি ও ফুসফুসে ঢুকে সংক্রমণ ঘটায়। চিকিৎসক সৈকতবাবু বলেন, ‘‘আতসবাজির ধোঁয়া সম্পর্কে সাবধান না হলে বিপদ বাড়বে।’’ তিনি আরও জানান, এই ধোঁয়া শরীরে ঢুকলে ফুসফুসের চিকিৎসা করানোর সঙ্গে নাক, কান, গলা ও শ্বাসনালিরও চিকিৎসা করতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ পুরোপুরি সারবে না।
কালীপুজোর পরে বাতাসে ভাসমান ধুলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি থাকে বলে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোল শাখার আধিকারিকেরা জানান। আতসবাজির ধোঁয়াই এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন তাঁরা। আসানসোলের চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তও বলেন, ‘‘আতসবাজির ধোঁয়ার কারণে প্রতি বছর এই সময়ে চেম্বারে শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বাড়ে।’’ হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্রবাবুর মতে, ‘‘এই ধোঁয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় শিশু ও প্রবীণদের। কারণ, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। প্রতি বছর আমরা তাই কালীপুজোর আগে-পরে শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য বাড়তি ব্যবস্থা রাখি।’’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, শব্দবাজির কুফলের মতো আতসবাজির ধোঁয়ার সমস্যা নিয়েও ধারাবাহিক সচেতনতা প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy