Advertisement
১৮ মে ২০২৪
শো-রুম বন্ধে অভিযান

যাত্রী-সুরক্ষার বালাই নেই, বিকোচ্ছে টোটো

হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ার পরে টোটো নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে রাজ্য। বেআইনি টোটোয় লাগাম পরাতে শো-রুম বন্ধে শিল্পাঞ্চলের নানা জায়গায় অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টোটো। লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি চলছে বলেও অভিযোগ। এই সব টোটো যাত্রী সুরক্ষা বিধি মেনে তৈরি হয়নি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

শহরের রাস্তায় দাপাচ্ছে টোটো। নিজস্ব চিত্র।

শহরের রাস্তায় দাপাচ্ছে টোটো। নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ার পরে টোটো নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে রাজ্য। বেআইনি টোটোয় লাগাম পরাতে শো-রুম বন্ধে শিল্পাঞ্চলের নানা জায়গায় অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টোটো। লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি চলছে বলেও অভিযোগ। এই সব টোটো যাত্রী সুরক্ষা বিধি মেনে তৈরি হয়নি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিএমইআরআই)-এর ডিরেক্টর হরিশ হিরানি জানান, কেন্দ্রের নির্দিষ্ট বিধি মেনে তাঁদের সংস্থায় ই-রিকশা তৈরি করা হয়ে থাকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ব্যবসায়িক স্বার্থে যাত্রী সুরক্ষার ন্যূনতম বিধিনিষেধ না মেনে টোটো বিক্রি হচ্ছে। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ তিনি জানান, তাঁদের তৈরি ই-রিকশায় ২৪০ ওয়াটের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে দৌড়য়। তিন জন যাত্রী বসতে পারেন। চলার সময়ে এই যান কাঁপে না। অথচ, বাজারে যে সমস্ত টোটো বিক্রি হয় সেগুলিতে ৬৫০ ওয়াটের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, যা রীতিমতো বিপজ্জনক। গরম হয়ে যে কোনও সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এই টোটো ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে দৌড়য়। চলার সময়ে কাঁপে। উল্টেও যেতে পারে যখন-তখন।

টোটো চালকেরা অবশ্য দাবি করেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী তৈরি টোটো চালিয়ে তাঁদের পোষাবে না। কারণ, কম গতি ও কম যাত্রী নেওয়ার ক্ষমতা। বাজার চলতি টোটোয় এক সঙ্গে আট জন পর্যন্ত বসানো যায়। কিন্তু যাত্রী সুরক্ষা? সিটি সেন্টারের কোর্ট মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক টোটো চালকের জবাব, ‘‘দুর্ঘটনা তো যে কোনও গাড়িতেই ঘটতে পারে। সাবধানে চালাই। বাকিটা কপাল!’’ বস্তুত, কপাল ভরসা করেই যাত্রীরা টোটোয় চড়েন। অনেকে বিপদের কথা জানেনও না। ইস্পাতনগরীর বি-জোনের শর্মিষ্ঠা নন্দী যেমন বলেন, ‘‘রিকশার চেয়ে জোরে যায়। বসেও আরাম। খারাপ কী!’’ সুরক্ষার কথা অবশ্য কখনও ভেবে দেখেননি, মেনে নেন তিনি। দুর্গাপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা শ্রীদাম সাউ আবার টোটোয় চড়ার আগে বলেন, ‘‘অত ভাবলে চলে না। যা হওয়ার হবে।’’

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, নানা সংস্থা চিন থেকে টোটো তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানি করে। তুলনায় ছোট কিছু সংস্থা সেই সমস্ত যন্ত্রাংশ কিনে তা জুড়ে টোটো তৈরি করে। তবে ব্যাটারি কিনতে হয় অন্য দোকান থেকে। যেমন, অরুণ গোস্বামী নামে এক টোটো চালক বেনাচিতির উত্তরপল্লির একটি শো-রুম থেকে টোটো কিনেছেন। অথচ, তাঁকে ব্যাটারি কিনতে হয়েছে ট্রাঙ্ক রোডের এক দোকান থেকে। টোটো বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আসার পরে কিছু সংস্থা ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। মেনগেট এলাকার তেমন এক সংস্থার কর্ণধার গগনদীপ সিংহ বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা করি। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজি-র মান অনুযায়ী গড়া টোটো বিক্রি করি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশ মেনে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি। অথচ, বেআইনি ভাবে শহরের বহু জায়গায় টোটো বিক্রি হচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের নির্দেশের পরে টোটোর একাধিক শো-রুম বন্ধ হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুরে। কিন্তু তার পরে অন্য ভাবে টোটো বিক্রি শুরু হয়েছে। কোথাও অলিগলি, কখনও কারও বাড়ি থেকে এই কারবার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি টোটো বন্ধে আরও কড়া হয়েছে মহকুমা প্রশাসন। বেনাচিতির উত্তরপল্লির একটি শো-রুম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনও ভাবেই টোটো বিক্রি করা যাবে না। খোঁজ পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

No Monitoring passenger security Toto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE