স্কুল-কলেজের সামনে তো বটেই, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও ধূমপান অপরাধ— এই নিয়ম যেন খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে। স্কুলের পাশে তামাকজাত নানা জিনিসের দোকান বা সরকারি দফতরের সামনে ধূমপানের ছবি দেখা যায় নানা জায়গাতেই। প্রশাসন সূত্রের খবর, ধূমপানের জরিমানা বাবদ পূর্ব বর্ধমানের কোথাও আয় নেই, মামলাও নেই। ‘তামাকমুক্ত’ জেলা গড়তে কমিটি গড়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন।
স্কুল শিক্ষা দফতর নভেম্বরে নির্দেশিকা জারি করে, স্কুলের সামনে দেওয়াল লিখন করে জানাতে হবে, ‘এখানে ধূমপান করা আইনত দণ্ডনীয়’। এর পরে সমাজকল্যাণ দফতরও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে এক নিয়ম জারি করে। কিন্তু জেলায় হাজারের বেশি মাধ্যমিক স্তরের স্কুল বা হাজার তিনেক অঙ্গনওয়াড়িতে সেই নিয়মের প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ। খণ্ডঘোষের সরঙ্গার মতো দু’একটি স্কুল ছাড়া প্রায় কোনওটিই তা মানেনি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ-সহ বিভিন্ন হাসপাতালেও ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করতে দেখা যায় অনেককে।
বুধবার জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জেলার নানা দফতরকে নিয়ে বৈঠক করেন। ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিযুক্ত ‘গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাক্যো সার্ভে’ সংস্থার দুই কর্তাও। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জনসমাগম হয় এমন এলাকায় প্রকাশ্যে ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। ওই সব এলাকা ‘ধূমপান নিষেধ ও তামাকমুক্ত’ বলে ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে দার্জিলিং ও হাওড়া জেলা ‘তামাকমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী ছ’মাস টানা প্রচার করে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি ‘নিষিদ্ধ’ জায়গায় ধূমপান ও তামাক ব্যবহারে ২০০ টাকা করে জরিমানা করা হবে। এ জন্য শুধু জেলা নয়, মহকুমা ও ব্লক স্তরে কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘১৫ অগস্টের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত’ জেলা হিসেবে পূর্ব বর্ধমানের নাম যুক্ত হবে বলে আশা করছি।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেনস্ট টিউবারকুলোসিস অ্যান্ড লাং ডিজিজ’ নির্দেশিত নিয়মের ৮০ শতাংশ মানা হলে জেলাকে ‘তামাকমুক্ত’ বলা সম্ভব। প্রশাসনের হিসেবে, জেলায় ১৩ লক্ষ মানুষ নিয়মিত ধূমপান ও তামাক ব্যবহার করেন। নতুন করে নেশায় যাতে কেউ আসক্ত না হন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরিমানা ছাড়াও নিয়ম ভেঙে তামাকের বিজ্ঞাপন করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। নাবালকদের তামাকজাত জিনিস বিক্রি করলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলাশাসক জানান।
এ দিনই খণ্ডঘোষের সারঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৬ জন শিক্ষক স্কুলের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুন্সী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘শিক্ষকরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। অভিভাবকেরাও অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy