লালন। সারমেয়দের সঙ্গে মা ও মেয়ে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
সাধারণত নর্দমা বা ডাস্টবিনে তাদের নোংরা ঘাঁটতে দেখতেই মানুষ অভ্যস্ত। তারা অনেক সময়ে বিনা কারণে পথচারীদের অযথা আক্রমণের শিকার হয়। পথের এই সব সারমেয়দের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে অণ্ডালের ছোড়া পঞ্চায়েতের বাঁকোলা কোলিয়ারির একটি কর্মী আবাসন চত্বর। অসুস্থ হলে রাস্তা থেকে তাদের এখানে তুলে নিয়ে এসে সুস্থ করিয়ে আবার নিজের এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ভাবে পশুপ্রেমের নজির সৃষ্টি করে চলেছেন বছর সাতাশের তরুণী সুমনপ্রীত কওর। তাঁকে এই কাজে সাহায্য করেন মা কুলবন্তদেবী।
২০১৩ সালে স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, সুমনপ্রীত মাসকয়েক স্থানীয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার পরে বাড়ির সামনে একটি পথকুকুরকে প্রায় আচ্ছন্ন থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে রানিগঞ্জে এক পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। তার পরে বাড়িতে রেখে তাকে সুস্থ করে তোলেন সুমনপ্রীত। তার নাম দেন ‘নানি’। ২০১৯ সালে মারা যায় ‘নানি’। সেই থেকেই তিনি ঠিক করেন অসুস্থ পথকুকুরদের সুস্থ করিয়ে তাদের পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে দেবেন। তাই কর্মী আবাসনে একটি লম্বা কক্ষ তৈরি করেন। রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আসা কুকুরদের সেখানে রেখে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলতে থাকেন তিনি।
সুমনপ্রীত বলেন, ‘‘রাস্তার ধারে ঝিমিয়ে পড়া, চোট লাগা বা ঘা হয়ে থাকা কুকুরদের কখনও হাঁটিয়ে বা স্কুটিতে চাপিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। এই কাজে মা সহায়তা করেন। এ ভাবে সাত বছরে প্রায় দেড়শো কুকুরকে সুস্থ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, বর্তমানে ১০টি কুকুর তাঁর বাড়ির আশ্রয়ে আছে। ওদের কুট্টু, পলু, লম্বু, নিকু, ছোট্টু– এ সব নামে ডাকা হয়। প্রতিদিন বাড়ির সামনে খাবারের সময়ে বেশকিছু কুকুর দাঁড়িয়ে থাকে। তাদেরও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তাদের মেনুতে ভাত, মাছ, মুরগির মাংসও থাকে।
মা কুলবন্তদেবী জানান, তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। তিনি মেয়ের এই কাজে খুশি। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের স্কুটির ধাক্কায় একটি কাক জখম হয়েছিল। সেটিকেও বাড়িতে নিয়ে এসে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলেছে সে। তার পরে কাকটি আমাদের বাড়ি ছেড়ে যায়নি। তাকেও প্রতিদিন খাবার দেওয়া হয়।’’ বাবা জগদীপ সিংহ বাঁকোলা কোলিয়ারির চিকিৎসাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি বলেন, “বাড়িতে মেয়ে পশু চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। ভালই লাগে।’’ ছোড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গুরুপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, “নিঃস্বার্থে যে ভাবে পশুপ্রেমের নজির তৈরি করছেন মেয়ে ও মা-সহ পুরো পরিবার, তা প্রশংসার যোগ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy