ব্রহ্মময় চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
এই শিল্পে ‘অধিকারী’র ভূমিকা কী, মন্দিরা-বাঁশির সঙ্গে কী ভাবে ক্ল্যারিওনেট-কঙ্গো সঙ্গত দিতে পারে— এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে দুর্গাপুরে সম্প্রতি আয়োজিত হল ‘যাত্রামোদী সম্মেলন’। পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের নানা প্রান্তের যাত্রাশিল্পীদের কাজকর্মের হদিস দিতে তৈরি হয়েছে ‘যাত্রামেব জয়তে’ নামে একটি সংগঠনও। প্রচার চলছে ফেসবুকেও। এই সব উদ্যোগে সূত্রধরের কাজটি করেছেন কাঁকসার শিক্ষক ব্রহ্মময় চট্টোপাধ্যায়।
‘যাত্রা’, লোকনাট্যের এই মাধ্যমটির সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির নাড়ির যোগ। ‘চৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, চৈতন্য-পূর্ব যুগেও এই মাধ্যমটি প্রচলিত ছিল। মধ্যযুগ এবং উনিশ শতক পেরিয়ে বর্তমান সময়েও যাত্রা শিল্পটির জনপ্রিয়তার খামতি নেই।
তা হলে এমন উদ্যোগের দরকার পড়ল কেন? মলানদিঘি দুর্গাদাস বিদ্যামন্দিরের বাংলার শিক্ষক নাট্যকার ব্রহ্মময়বাবুর দাবি, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং দক্ষিণবঙ্গের নানা গ্রামের যাত্রাশিল্পীদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করতেই গত বছর নভেম্বরে জন্ম ‘যাত্রামেব জয়তে’র। সংস্থা ও তার কাজকর্মের প্রচারে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন স্কুলেরই কম্পিউটার শিক্ষক স্বর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রহ্মময়বাবু জানান, নানা যাত্রাশিল্পী ও যাত্রাদলের নাম-পরিচয় তুলে ধরতে এবং প্রবীণ শিল্পীদের সম্মাননা জানাতেও পদক্ষেপ করা হয়েছে। আর এ সবই যাত্রাশিল্পীদের চাঁদা এবং শিক্ষকের নিজের দেওয়া অনুদানের ভিত্তিতে চলছে।
সম্প্রতি ‘যাত্রামোদী সম্মেলন’-এ যোগ দিয়েছিলেন পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলার প্রায় দেড়শো যাত্রাশিল্পী। সেখানে পালা রচনা, যাত্রার নিজস্ব অভিনয় শৈলী, মৌলিক সঙ্গীতের ব্যবহার-সহ যাত্রার নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন শিল্পীরা। কথা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রাদলগুলির নানা সমস্যা নিয়েও। এ ছাড়া গ্রামে গ্রামে গিয়ে যাত্রাশিল্পীদের সংবর্ধনা দেওয়ার কাজটিও করে চলেছে সংগঠনটি। পরে আরও কর্মশালা, পত্রিকা প্রকাশ, আলোচনাসভা আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে ওই সংস্থার দাবি।
এই উদ্যোগ নিয়ে ওই শিক্ষকের আশা, ‘‘এর ফলে যাত্রা-সংস্কৃতির গৌরবময় দিকটি সম্পর্কে আরও বেশি করে আগ্রহী হবেন নবীন প্রজন্ম।’’ যাত্রাশিল্পী ও পালাকার ওমপ্রকাশ বিশ্বাসও বলেন, ‘‘যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে, আমাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা জরুরি। এই উদ্যোগ সেটাই করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy