কালনা মহকুমা কৃষি খামারে ড্রোন দিয়ে কীটনাশক ছড়ানো। — নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসনিক কাজে ড্রোনের ব্যবহার তো হয়ই। পাশাপাশি বায়ু দূষণ রোধে ইতিমধ্যে পশ্চিম বর্ধমানে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ বার কৃষিকাজে এর সুবিধা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমা কৃষি দফতর। জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে চাষিদের যেমন সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি, নানা রকমের বিপদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে সোমবার কালনা মহকুমা কৃষিখামারে চাষিদের নিয়ে আলোচনাসভা হয়। পরে তার ব্যবহার হাতে-কলমে দেখানো হয় বলে জানান জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা অম্লান সরকার।
আলোচনায় অম্লান ছাড়াও ছিলেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ, ব্লক কৃষি আধিকারিক শুভেন্দু মণ্ডল-সহ চাষের কাজে ব্যবহার করা ড্রোন বিষয়ক কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা এই প্রযুক্তির সুবিধাগুলি তুলে ধরেন। ১৫ কেজির বেশি ওজনের একটি ড্রোনে কী কী রয়েছে, তা খুঁটিয়ে দেখানো হয়।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, সাধারণত এই ধরনের ড্রোনগুলির দাম আট থেকে ন’লক্ষ টাকা। চাষিরা তা কিনলে মিলবে প্রায় তিন লক্ষ টাকা সরকারি ভর্তুকি। সাধারণত চাষিরা পিঠে ড্রাম নিয়ে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেন। বিঘা প্রতি জমিতে চার ড্রাম জলের প্রয়োজন। এক একটি ড্রামে থাকে প্রায় ১৬ লিটার জল। সেখানে এই ধরনের ড্রোনে রয়েছে ১০ লিটার জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ছোট একটি ড্রাম। জমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু থেকে এর মাধ্যমে তীব্র গতির বাতাসের সঙ্গে গাছের নীচের অংশ পর্যন্ত ছড়ানো যাবে কীটনাশক। ড্রোনে থাকা ১০ লিটার জলে প্রায় তিন বিঘা জমিতে স্প্রে করা যায়। প্রতি একর জমি স্প্রে করতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত মিনিট। ফলে, প্রচুর জল সাশ্রয়ের পাশাপাশি, কম সময়ে অনেক জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব হবে।
এক কৃষি বিশেষজ্ঞের দাবি, এক ফোঁটা জলকে এই যন্ত্র দু’শো গুণ ভেঙে দিতে পারে। তা ধোঁয়ার মতো গাছের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পাশাপাশি, প্রতি বছর চাষের কাজে নেমে সাপ এবং পোকার কামড়ে প্রচুর চাষির মৃত্যু হয়। ড্রোন ব্যবহারে এ ধরনের কোনও ঝুঁকি থাকবে না। তা ছাড়া পিঠে ড্রাম নিয়ে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করায় অসুস্থতার ঝুঁকিও থাকে। এ ক্ষেত্রে জমির অনেক দূর থেকে রিমোটের মাধ্যমে ড্রোনকে পরিচালনা করা যায়। ব্যাটারি পরিচালিত এই ধরনের ড্রোন কিনে ব্যবসায়িক কাজেও ব্যবহার করতে পারেন চাষি অথবা কৃষি সমবায়গুলি।
অম্লান বলেন, “জমিতে জলের পরিমাণ কত, কোনও অংশ শুকিয়ে গিয়েছে কি না, কোন অংশ ফসল তোলার মতো অবস্থায় রয়েছে, ফলন কেমন হতে পারে— এ রকম নানা তথ্য ড্রোন ব্যবহার করেও জানা সম্ভব। যন্ত্রটির মধ্যে উন্নত মানের ক্যামেরা এবং সেন্সর রয়েছে। যার মাধ্যমে ধানের আঁটিতে কত গাছ রয়েছে, তা জানা যায়।” মহকুমা কৃষি আধিকারিক পার্থ বলেন, “চাষে শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। ড্রোনের মাধ্যমে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করলে শ্রমিকের সংখ্যা কম লাগবে।”
ধাত্রীগ্রামের একটি সমবায় ইতিমধ্যে এই ড্রোন ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে বলে দাবি কৃষি কর্তাদের। তাঁরা জানান, বিষয়টি নিয়ে চাষিদের মধ্যে আরও প্রচার চালানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy