Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
কচ্ছপ-যাত্রা

ভিন্‌ রাজ্য থেকে বর্ধমান হয়েই পাচার

সম্প্রতি বর্ধমান স্টেশনে এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে একাধিক বার বস্তাবন্দি কচ্ছপ উদ্ধার করেছে রেলপুলিশ। বিশেষ এক প্রজাতির কচ্ছপ মিলেছে সড়ক পথেও। উঠেছে কচ্ছপ পাচারের অভিযোগ। দেশের কোন পথ ধরে বর্ধমানে আসে কচ্ছপ, এ জেলা থেকে কোথায় যায়, কেন এত চাহিদা, সে সবের খোঁজ নিল আনন্দবাজার।উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা অববাহিকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ। সেখান থেকে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে আরও দূর। পুজোর সময় থেকে চৈত্রের গোড়া পর্যন্ত কখনও ট্রেনের কামরা কখনও জাতীয় সড়ক ধরে এ পথেই পাড়ি দেয় কচ্ছপেরা।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২২
Share: Save:

‘চোরাপথ’টা অনেকখানি।

উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা অববাহিকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ। সেখান থেকে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে আরও দূর। পুজোর সময় থেকে চৈত্রের গোড়া পর্যন্ত কখনও ট্রেনের কামরা কখনও জাতীয় সড়ক ধরে এ পথেই পাড়ি দেয় কচ্ছপেরা।

যদিও গোপনতার ফাঁক গলে মাঝেমধ্যেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় বস্তাবন্দি কচ্ছপ। নাগালে আসে পাচারকারীরাও। বিশেষত বর্ধমান স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন থেকে মেলে এই বিশেষ ‘গ্যাঞ্জেস সফট শেলড টার্টেল’ বা ‘ইন্ডিয়ান ফ্লাগশিপ টার্টেল’। বর্ধমান হয়েই দেশের সীমানা পার করে বাংলাদেশ হয়ে তারা পৌঁছে যায় সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ডের মতো দেশের হোটেল, রেস্তোরাঁয়। আর এই চোরাপথের করিডর হয়ে ওঠে হাওড়া-বর্ধমান-দুর্গাপুর-আসানসোল রেল লাইন। তবে বিকল্প রাস্তাও আছে। তা হল, দু’নম্বর জাতীয় সড়ক। শীতের সময় ফি বছরই ওই রাস্তায় পাচারকারীদের হাত থেকে কচ্ছপ উদ্ধার করে বন দফতর।

বন দফতর সূত্রে জানা যায়, এত দিন পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরের বাসিন্দাদের নামই পাচারকারী হিসেবে ‘ওয়াইল্ড লাইফ কন্ট্রোল ব্যুরো’র তালিকায় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি পরপর দু’বার তল্লাশিতে মধ্যপ্রদেশের একটি শহরের নামও উঠে এসেছে। সম্প্রতি বর্ধমানের বড়শুলের কাছে একটি গাড়ি আটকে বনদফতর ১৯টি বস্তা থেকে ৫০১টি কচ্ছপ উদ্ধার করে। সেখানে আবার পাচারকারী হিসেবে পশ্চিম দিল্লির বিকাশপুর এলাকার নাম পাওয়া গিয়েছে।

পাচারের পথ বর্ধমান হয়েই কেন?

বন দফতরের দক্ষিণ-পূর্ব সার্কেল সূত্রে জানা যায়, ‘ওয়াল্ড লাইফ কন্ট্রোল ব্যুরো’ দিল্লিতে বসে পাচারকারীদের গতিবিধির উপর নজর রাখে। সেখান থেকেই সিআইডিকে খবর দেওয়া হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট এলাকার বন দফতরের কাছে খবর পৌঁছয়। ওই সার্কেলের মুখ্য বনপাল কল্যাণ দাস বলেন, “সব রাজ্যই ক্রমাগত পাচারকারীদের ধরছে। কচ্ছপও উদ্ধার করছে। কিন্তু আমাদের রাজ্য দিয়ে কচ্ছপ বিদেশে পাচার হয় বলে আমরা বাড়তি সতর্কতা নিয়ে থাকি। সিআইডির সঙ্গে রেল ও জেলা পুলিশও আমাদের সাহায্য করে।’’

বন দফতরের দাবি, দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশ জুড়ে শক্তিশালী চক্র রয়েছে। গত বছর পর্যন্ত পাচারকারীদের তালিকায় মহিলাদের নাম উঠে এসেছিল। এই সব মহিলারা এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বর্ধমানে আসতেন। সেখান থেকে ট্রেনে সুলতানপুর গিয়ে কচ্ছপ কিনে বস্তায় ভরে ট্রেনেই ফিরতেন। ট্রেনে ওঠার সময় মাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে যাত্রীদের জানাতেন। আবার বর্ধমানে নেমে একদল মহিলা পিক-আপ ভ্যানে করে কচ্ছপ নিয়ে গিয়ে ডানকুনি বা হাওড়া গিয়ে মহাজনদের হাতে তুলে দিতেন। কখনও ট্রেনে ব্যান্ডেল, নৈহাটি বা শিয়ালদহে গিয়েও কচ্ছপ মহাজনদের হাতে তুলে দেওয়া হত। তারপর বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ‘কচ্ছপের দৌড়’ শেষ হয় ব্যাঙ্ককে। এ বছর অবশ্য কোনও মহিলা এখনও ধরা পড়েনি।

বন দফতর, সিআইডি কর্তাদের দাবি, ভাগীরথীর অববাহিকায় উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর বা বেনারসের সাহাগঞ্জের কাছে যে কচ্ছপ বন্যপ্রাণী আইন ভেঙে ধরা হয়, ব্যাঙ্ককের রেস্তোরাঁয় তার দাম হয়ে যায় ভারতীয় মুদ্রায় ২৫০০ টাকা। এক কর্তার কথায়, “কচ্ছপের স্যুপ ওখানকার খাদ্যরসিকদের কাছে খুবই প্রিয়। তার সঙ্গে কচ্ছপের সুস্বাদু মাংস তো আছেই। তাই দাম বাড়তেই থাকে।’’ সে ‘লোভে’ই বোধহয় শেষ হয় না কচ্ছপ-যাত্রাও।

অন্য বিষয়গুলি:

Tortoise Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE