Advertisement
১৬ মে ২০২৪

দুই ছাত্রীর নাচের ক্লাসে মেতে উঠছে বস্তি

এলাকারই একটি ক্লাবঘর। সেখানেই ফি দিন বিকেল নাচের ক্লাস হয়। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গানের সুরে দুই ধ্রুপদী নৃত্যের শৈলী যত্ন করে শেখাচ্ছেন শ্রেয়া ও স্বরূপা। শিখছে অঞ্জলি চার, সোনালি রউল, শুভ রবিদাসেরা। মুদ্রায় ভুল হলে তা হাতে ধরে শুধরেও দিচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দুই পড়ুয়া।

আনন্দে: নাচের প্রশিক্ষণে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

আনন্দে: নাচের প্রশিক্ষণে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:৫০
Share: Save:

সার দিয়ে গোটা কয়েক ঝুপড়ি। সেখানেই থাকে কয়েক জন কিশোর-কিশোরী। নেই খেলাধুলো বা বিনোদনের তেমন সুযোগ। এমনই এলাকার কয়েক জনকে প্রতি দিন কলেজ যাওয়া-আসার পথে ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে দেখতেন আসানসোলের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া শ্রেয়া চক্রবর্তী ও স্বরূপা গুরু। এখন তাঁদেরই তত্ত্বাবধানে ওডিশি ও ভারতনাট্যমের ক্লাসে আনন্দ খুঁজছে আসানসোলের চেলিডাঙায় রেললাইনের পাড়ের বস্তির বাসিন্দা ওই কিশোর-কিশোরীরা।

এলাকারই একটি ক্লাবঘর। সেখানেই ফি দিন বিকেল নাচের ক্লাস হয়। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গানের সুরে দুই ধ্রুপদী নৃত্যের শৈলী যত্ন করে শেখাচ্ছেন শ্রেয়া ও স্বরূপা। শিখছে অঞ্জলি চার, সোনালি রউল, শুভ রবিদাসেরা। মুদ্রায় ভুল হলে তা হাতে ধরে শুধরেও দিচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দুই পড়ুয়া। দিদিদের কাছ থেকে তালিম পেয়ে ভীষণ খুশি অঞ্জলিরাও। তাদের কথায়, ‘‘পড়াশোনার পাশে অন্য যে একটা জগৎ আছে, দিদিরা না থাকলে জানতেই পারতাম না। এখন পাড়ায় বা স্কুলের অনুষ্ঠানেও যোগ দিই।’’

তবে এমন ক্লাস শুরু করাটা বেশ কঠিন ছিল, দাবি স্বরূপাদের। বস্তি জুড়ে উপচে পড়া নোংরা জল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কোথাও নেই এক চিলতে খেলার মাঠ বা পার্ক। বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। এই রকম পরিস্থিতিতে নাচের ক্লাসের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের রাজি করাতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল বলে জানান চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া শ্রেয়া। তার পরেও হাল ছাড়েননি দুই ছাত্রী। কেন? স্বরূপা বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েগুলোকে এক ঝলক দেখেই মনে হল, ওরা পারবে। কিন্তু এই পরিবেশে যেখানে সামান্যতম বিনোদনের সুযোগও নেই, সেখানে এই ধরনের ক্লাসের আয়োজন সত্যিই কঠিন ছিল। তবে ওদের প্রতিভা আছে। আমরা যেটুকু জানি, শেখাচ্ছি।’’

প্রথমে বাধা দিলেও এখন অবশ্য দু’হাত ভরে এই দুই ছাত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বাসিন্দারা। পেশায় দিনমজুর সাহেব রবিদাস বলেন, ‘‘নুন আন্তে পান্তা ফুরোয়। নাচ দূর-অস্ত, পড়াশোনার খরচ তুলতেও হিমসিম হয়ে যায়। সেখানে ছেলেমেয়েরা একটু অন্তত আনন্দ পাচ্ছে, এটাই বিরাট পাওয়া।’’ পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্যেরাও। নাচের ক্লাসের জন্য প্রতি দিন ক্লাবঘর পরিষ্কার করে রাখেন তাঁরা। সোমনাথ লো নামে এক ক্লাব সদস্য বলেন, ‘‘এ পাড়ায় এমন ক্লাস আগে কখনও হয়নি। আমরাও চাই, স্কুলটা চলুক।’’

দুই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন কলেজের শিক্ষক ও অন্য পড়ুয়ারাও। প্রায়শই টিফিনের ব্যবস্থা করা-সহ নানা বিষয়ে এগিয়ে আসেন ইরফান খান ও সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় নামে দুই ছাত্র। দুই শিক্ষক অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় ও অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রাবস্থায় যা ভাবতে পারিনি, এখন আমাদের ছাত্রীরাই তা করে দেখাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE