Advertisement
১৭ মে ২০২৪

স্বচ্ছতার পুরস্কার পাচ্ছে দুই স্কুল

একটি স্কুল হল বর্ধমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। আর একটি আউশগ্রামের যাদবগঞ্জ আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়।

সচেতনতা: বর্ধমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

সচেতনতা: বর্ধমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

সৌমেন দত্ত ও প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
বর্ধমান ও আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৯
Share: Save:

জেলার দু’প্রান্তে দুটি স্কুলেই তফশিলি জাতি ও উপজাতি পড়ুয়াদের আধিক্য বেশি। দুটি স্কুলই নিজের মতো করে পড়ুয়াদের সচেতনতা, স্বচ্ছতার পাঠ দিয়েছে। বদলে ফেলেছে স্কুলের পরিবেশ। শুক্রবার কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে দিল্লিতে স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার পাবে দুটি স্কুলই।

একটি স্কুল হল বর্ধমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। আর একটি আউশগ্রামের যাদবগঞ্জ আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়। জেলার সর্বশিক্ষা অভিযানের আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরীর দাবি, “গোটা দেশে তিরিশটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ২০১৬ সালের স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার পাচ্ছে। তার মধ্যে আমাদের জেলারই দুটি স্কুল। খুবই গর্বের বিষয়।”

জানা গিয়েছে, স্বচ্ছ বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে রাজস্থান ও তামিলনাড়ুর স্কুল। মধ্যপ্রদেশের একটি স্কুলের সঙ্গে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বর্ধমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের দাবি, গোটা জেলার ৯৭টি স্কুল অনলাইনে আবেদন করেছিল। সর্বশিক্ষা দফতর একটি কমিটি গড়ে স্কুলের পরিবেশ দেখে রাজ্য থেকে ১৫টি স্কুলের নাম পাঠায়। এরপর ওই তালিকা খতিয়ে দেখে কেন্দ্রের কাছে ওই দুটি স্কুল ছাড়াও কেতুগ্রামের কাঁটারি পূর্বপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পাঠানো হয়।

প্রশ্ন হল, বাকিদের থেকে এই দুটি স্কুল আলাদা কোথায়? উত্তর মেলে স্কুলে গেলেই।


যাদবগঞ্জ আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

বছর পাঁচেক আগেও বর্ধমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘরগুলি ছিল অস্থায়ী। পরিবেশের জন্য স্কুলে পড়ুয়ারা আসত না। প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুবীর দে দায়িত্ব নেওয়ার পরে চাকা ঘুরতে শুরু করে। তাঁর উদ্যোগেই পড়ুয়া টানতে শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যান। স্কুলের পাকা ভবন তৈরি হয়। পাল্টাতে শুরু করে পরিবেশ। পড়ুয়া মেহেরুন্নেসা খাতুন, রাহুল বেসরারা বলেন, “স্কুল শুরু হওয়ার আগে আমরা চলে আসি। বাড়ির মতোই ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার রাখি। বাগানে জল দিই।’’ এক শিক্ষকের নেতৃত্বে স্কুলে রয়েছে মেডিক্যাল ইউনিট। বানানো হয়েছে পাখিরালয়। স্কুলের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে স্বচ্ছতার পাঠ। এ ছাড়াও বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে ভেষজ বাগানে দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য নিয়ম করে আলাদা করে রাখা হয়। পচনশীল বস্তু দিয়ে জৈব সার তৈরি করি। সেই সার বাগানের কাজে লাগে।’’

আউশগ্রামের স্কুলটির পড়ুয়ারাও স্কুল তো বটেই পুরো গ্রামকেই স্বচ্ছ করে তুলেছে। প্রতিদিন স্কুল চত্বর, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখা, স্বাস্থ্য-সচেতনতা নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করা, এ স্কুলের নিয়ম। পড়ুয়াদের নখও পরীক্ষা করে দেখেন শিক্ষকেরা। পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করে রাখা হয়। নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করেন শিক্ষক-পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক বিজন রানার দাবি, “আমরা মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার উপর জোর দিয়েছি। যা আদিবাসী-অধ্যুষিত এলাকায় বিরল।” স্থানীয় বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, “ওই স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষকদের জন্য বেশ কয়েকটি গ্রামকেও নির্মল করা গিয়েছে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE