Advertisement
১২ জুন ২০২৪

জলস্তর কমছে, জোর বিন্দু সেচে

চাষের মরসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি মেলে না। ফলে মাটির তলার জলই ভরসা। কিন্তু সেই জল যথেচ্ছ তোলাতেও বিপদ। বেশ কিছু ব্লকে আর্সেনিকের মাত্রা সীমাছাড়া। এই পরিস্থিতিতে বিন্দু সেচে সাফল্য পেল পূর্বস্থলী ১ ব্লক কৃষি দফতর।

বন্দোবস্ত: পূর্বস্থলীর বগপুরে। নিজস্ব চিত্র

বন্দোবস্ত: পূর্বস্থলীর বগপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

চাষের মরসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি মেলে না। ফলে মাটির তলার জলই ভরসা। কিন্তু সেই জল যথেচ্ছ তোলাতেও বিপদ। বেশ কিছু ব্লকে আর্সেনিকের মাত্রা সীমাছাড়া। এই পরিস্থিতিতে বিন্দু সেচে সাফল্য পেল পূর্বস্থলী ১ ব্লক কৃষি দফতর। বগপুর পঞ্চায়েতের কুলডাঙা গ্রামে বিঘে তিনেক জমিতে বিন্দু জলসেচে পেয়ারা চাষে সাফল্য মিলেছে।

কী এই পদ্ধতি?

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়তি জল নষ্ট না করে গাছের গোঁড়ায় বিন্দু বিন্দু করে জল দেওয়া হয়। ফলে স্বাভাবিকের দশ ভাগের এক ভাগ জল লাগে। জল জমে না থাকায় মাটি ফাঁপা থাকে। তাতে একদিকে কাণ্ড পচা, গোড়া পচা রোগের সম্ভাবনা কমে, আবার মাটির মধ্যে সহজে হাওয়া চলাচল করায় গাছের শিকড় অনেক দূর ছড়ায়। বৃদ্ধি হয় ভাল। এ ছাড়া শুধুমাত্র গাছের গোড়ায় জল পৌঁছনোয় আশপাশের মাটি শক্ত থাকে। তাতে আগাছা জন্মায় না। ফলনও মেলে বেশি।

তবে এত সুবিধে থাকার পরেও বর্ধমান বিন্দু-সেচ তেমন প্রচলিত নয়। এমনকী, আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকাতেও এর প্রচলন নেই। পূর্বস্থলী ১ ব্লক কৃষি দফতর সেই চিরাচরিত নিয়মই ভেঙেছে। আত্মা প্রকল্পে এই চাষের জন্য বেছে নেওয়া হয় কুলডাঙা গ্রামের পেয়ারা চাষি সাইফুল শেখের তিন বিঘার খেতকে। খেতের মধ্যে একটি উঁচু স্ট্যান্ড তৈরি করে বসানো হয় হাজার লিটারের ট্যাঙ্ক। এরপরে গোটা জমির মাটির তলা দিয়ে বসানো হয় সরু পাইপ। কিছু কিছু পাইপ বিছানো থাকে জমির উপরিভাগেও। পাইপের গায়ে এমন ভাবে ছিদ্র করা হয়, যাতে পেয়ার গাছের গোঁড়ার সামনেই তা থাকে। পাম্পের মাধ্যমে ট্যাঙ্কে জল তোলার ব্যবস্থা করা হয়। তার সঙ্গো জোড়া হয় টাইমার। যাতে প্রয়োজন হলেই টাইমারে আগে থেকে বেঁধে দেওয়া জল বিন্দু বিন্দু করে গাছের গোড়ায় পৌঁছয়। পেয়ারার পাশাপাশি বাকি জমিতে চাষ করা হয় জলদি জাতের পেঁয়াজ।

কুলডাঙায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ পুষ্ট হয়েছে পেয়ারা গাছগুলি। পেঁয়াজের ফলনও ভাল মিলবে বলেই তাঁর আশা। সাইফুল বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। জলের উৎস সীমিত হলেও বেশি জমিতে চাষ করা সম্ভব।’’

বিন্দু সেচে সফলতা মেলায় খুশি কৃষি দফতরও। ব্লক কৃষি আধিকারিক পরিতোষ হালদার বলেন, ‘‘শুধু সেচ নয়। এই ব্যবস্থায় গাছের গোঁড়ায় নির্দিষ্ট পরিমাণ তরল অনুখাদ্য এবং সার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’’ পূর্বস্থলী ১ ব্লকের আত্মা প্রকল্পের অ্যাসিস্ট্যান্ট টেকনোলজি ম্যানেজার নিবিড় মজুমদার জানান, জলের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকায় মাটির তলা থেকে বেশি জল তোলা মানেই বিপদ। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা যত বিন্দু সেচ ব্যবস্থার দিকে এগোবেন ততই ভাল। আত্মার ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার সন্দীপ মজুমদারেরও দাবি, ভবিষ্যতে আরও বড় এলাকায় এই পদ্ধতিতে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Layer Irrigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE