সমাধিক্ষেত্র। নিজস্ব চিত্র
রাজকন্যাকে ভালবাসার মূল্য চোকাতে হয়েছিল জীবন দিয়ে। রাজরোষে খুন হওয়া কিশোরের দেহ পোঁতা হয়েছিল জঙ্গলে। কথিত রয়েছে, তার পরেই, শোকে কাতর তাঁর প্রেমিকা আত্মঘাতী হয়েছিলেন প্রাসাদে। তাকেও সমাধিস্থ করা হয়েছিল প্রেমিকের সমাধির পাশেই। আউশগ্রামের দেবশালা এলাকার নাগরপোঁতার জঙ্গল নিয়ে এমন গল্প লোকমুখে ছড়িয়েছে বহু দূর। এ বার সেই সমাধিক্ষেত্রকে পর্যটনকেন্দ্রে বদলে ফেলার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানিক রুইদাসের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে অনাদরে পড়েছিল জায়গাটি। সম্প্রতি তিনি এবং ঝণ্টু শেখ নামে এক বন্ধু সমাধি দু’টির সংস্কার করেন। তাঁর কথায়, “যে জায়গায় এখন বাস করছি, একসময় সেখানে ছিল রাজগড়ের সামন্ত রাজার অন্দরমহল। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন রাজার লেঠেল বাহিনীর সদস্য। অবহেলায় ইতিহাসের একটা খণ্ড ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
ইতিহাস গবেষকদের মধ্যে শিবশঙ্কর ঘোষ জানান, দেবশালার আগের নাম ছিল রাজগড়। গোপভূম পরগনার সামন্ত রাজার অধীনে ছিল ওই এলাকা। সেখানে এখনও রাজপ্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ রয়েছে। জায়গাটি ‘গড়ের ডাঙা’ নামে পরিচিত। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজগড়ের সামন্ত রাজার কন্যা এবং এক গোপ কিশোর পরস্পরকে ভালবেসেছিলেন। কিন্তু রাজ পরিবার সে সম্পর্ক মানতে পারেনি। এক দিন রাতের অন্ধকারে রাজকন্যা তার প্রেমিকের হাত ধরে রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে যান। পরে লেঠেল বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে তারা। রাজার নির্দেশে কিশোরকে হত্যা করে জঙ্গলে পুঁতে দেওয়া হয়।
দেবশালা থেকে বিলাসপুর হয়ে পানাগড় যাওয়ার জঙ্গলের মেঠো রাস্তার পাশেই রয়েছে তাদের সমাধি। স্থানীয়েরা তাতে গাছের পাতা, ফুল ছড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান। তাঁদের একাংশ মনে করেন, প্রশাসন এগিয়ে এলে জায়গাটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। ওই এলাকার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহনদাস পাত্র বলেন, “ওই দুই সমাধি দেখতে আসেন বাইরের অনেকে। রাজবাড়ির ভগ্নাবশেষ এখনও রয়েছে। এগুলিকে কেন্দ্র করে এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে।”
বিডিও (আউশগ্রাম ২) গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইতিহাস গবেষকদের জন্য ওই এলাকায় একটি তথ্য সংবলিত বোর্ড টাঙানো হবে। সেখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়া যায় কিনা, তা নিয়ে জেলা পর্যটন দফতরের সঙ্গে কথা বলা হবে।” জেলা পর্যটন আধিকারিক মহম্মদ হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য, “এ ধরনের প্রস্তাব এলে খতিয়ে দেখে পাঠানো হবে রাজ্য দফতরে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy