বিপত্তি: বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে এই এলাকাতেই। নিজস্ব চিত্র
রেললাইনের নীচে সরু আন্ডারপাস। জাতীয় সড়কের উপরে সেই এক চিলতে ফাঁক গলে প্রতিদিন যাতায়াত করে কয়েক হাজার গাড়ি। কলকাতা থেকে বোলপুর যাওয়ার অন্যতম প্রধান এই রাস্তায় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে আন্ডারপাসের উপরে উড়ালপুল হওয়ার অনুমোদনও মিলেছে। আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী অসংখ্য যাত্রী এবং এলাকার মানুষজন। কারণ, উড়ালপুল না-হলে ঝক্কি কমার সম্ভাবনা যে আশু নেই, তা হাড়ে হাড়ে টের পান ওই রাস্তার নিত্যযাত্রী থেকে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের পর্যটকেরা।
শনিবারও বাসের ছাদ থেকে ওই এক ফুঁকোতে পড়ে যান পাঁচ পরীক্ষার্থী। সেই সঙ্গে পুরনো প্রশ্নটি জেগে উঠল, ওই একফুঁকোর যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি মিলবে?
কলকাতা থেকে বর্ধমানের নবাবহাট হয়ে জাতীয় সড়ক (২বি) ধরে বোলপুর যাতায়াতে অন্যতম অসুবিধার নাম: ভেদিয়ার আন্ডারপাস। ওই আন্ডারপাসের উপর দিয়ে গিয়েছে হাওড়া ডিভিশনের সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন। শুধু পর্যটক থেকে সাধারণ যাত্রীরা তো বটেই, ওই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত বালি-পাথরের গাড়ি চলে এবং বীরভূমের এক বড় অংশের মানুষ এই রাস্তাই ব্যবহার করেন বর্ধমানে যাতায়াতের জন্য। ওই রাস্তার নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা, এই গরমেও খুব সুখকর নয়। তাঁদের কথায়, “এক পশলা বৃষ্টি হলেই আন্ডারপাসের ভিতরে জল জমে যায়। সেই অভিজ্ঞতা আমাদের বহুবার হয়েছে। কিন্তু, এমন প্রবল গরমেও দেখছি, আন্ডারপাসের ভিতরের রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। সে জন্য গাড়ি গেলেই দুলতে থাকে।”
ভেদিয়ার ওই আন্ডারপাস দিয়ে বাস চালানো যে খুবই ঝক্কির, তা জানাচ্ছেন চালকেরা। তাঁদের ক্ষোভ, আন্ডারপাসের রাস্তা কংক্রিটের। কিন্তু, বালি-পাথর বোঝাই ভারী ট্রাক-ট্রেলার নিত্য যাওয়ার ফলে ওই রাস্তার পাথর উঠে শোচনীয় দশা। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার উপর দিয়ে ওইটুকু আন্ডারপাস পেরোতেই হাল খারাপ হয়ে যায়। এক বাস-চালকের কথায়, ‘‘একটু নড়বড় করলেই গাড়ি গিয়ে ধাক্কা খাবে আন্ডারপাসের দেওয়ালে। তাই খুবই সাবধানে চালাতে হয়। তা ছাড়া, বাসের ছাদে যে যাত্রীরা বসে থাকেন, তাঁদের জন্যও খুব ঝুঁকির।’’
কতটা বিপজ্জনক ওই আন্ডারপাস, তা টের পাওয়া গিয়েছে শনিবারও। চতুর্থ শ্রেণি পদে নিয়োগ-সংক্রান্ত পরীক্ষা দেওয়ার পথে আহত হন বর্ধমানে পাঁচ পরীক্ষার্থী। তাঁদের অভিজ্ঞতা, “ভয়ঙ্কর অবস্থা! আন্ডারপাসে বাস ঢুকতেই মনে হল গুহার ভিতর ঢুকে পড়েছি। এক দিকে বাস দুলছে, পাশে আন্ডারপাসের দেওয়াল। কী ভাবে যে পড়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি।” এর আগেও বেশ কয়েকবার ওই একফুঁকোতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি আটকে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েকবার বর্ষার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও, গরমে এ ধরনের ঘটনা প্রথম। শুধু দুর্ঘটনা কেন, ওই আন্ডারপাসে যানজটও ভোগায় নিত্যযাত্রীদের।
গুসকরার তৃণমূল কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “আন্ডারপাস পেরনোর সময় পাথর ছিটকে আসছে। রবিবার সকালে গাড়ি নিয়ে বোলপুর যাওয়ার পথেই ওই অভিজ্ঞতা হয়েছে।” ওই আন্ডারপাস ছাড়াও জাতীয় সড়কের ওই রাস্তায় তালিত রেলগেটেও সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। এক বার রেলগেট পড়ে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে ফেঁসে থাকতে হয় যাত্রীদের। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উড়ালপুল তৈরির টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। উড়ালপুল তৈরি করবে রাজ্য পূর্ত দফতরের হাইওয়ে ডিভিশন এবং সদ্য তৈরি হওয়া রেল ওভারব্রিজ বিভাগ।
সেই উড়ালপুলের দিকেই তাকিয়ে বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy