—প্রতীকী ছবি।
বাড়ি ফেরার ট্রেনে মহিলা কামরায় একাই ছিলেন তিনি। দরজার কাছে এগিয়ে যেতেই এক যুবক তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান। মহিলা কামরায় ওঠা নিয়ে প্রশ্ন করতেই টানাহেঁচড়া শুরু হয় বলে অভিযোগ। কানের দুল খুলে দিয়েও রেহাই পাননি মহিলা। ওই যুবক তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সকালে কাটোয়ার বেড়ার কাছ থেকে জখম অবস্থায় উদ্ধার হন মহিলা। কয়েক হাত দূরে মেলে এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ।
পুলিশের অনুমান, ওই যুবকই ট্রেনে ছিল। মহিলা পড়ে যাওয়ার পরে সে-ও হয়ত ঝাঁপ দেয়। জিআরপির একটি সূত্রের দাবি, ওই যুবক কালনায় এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত। বুধবার থেকে পলাতক ছিল সে। রাতে পরিজনেরা দেহ শনাক্ত করে জানান, পুলিশের অনুমানই ঠিক। মৃত চিরণ বাগ কালনার নান্দাই খানপুর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা।
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর তিরিশের রাধিকা মণ্ডল কাটোয়া শহরের পাবনা কলোনিতে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকেন। বুধবার বিকেলে কাটোয়া থেকে নবদ্বীপে ট্রেনে করে ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার জন্য রাত ৮টা নাগাদ বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট থেকে ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন কাটোয়া স্টেশনে ঢোকার আগে ওই ঘটনা ঘটে, অভিযোগ তাঁর।
রাত হয়ে গেলেও স্ত্রী বাড়ি না ফেরায় রাধিকার স্বামী মিঠুন ওরফে বাপন মণ্ডল বারবার ফোন করেও প্রথমে যোগাযোগ করতে পারেনি। পরে রাত ১০টা নাগাদ ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন তিনি। মিঠুন বলেন, “আমার স্ত্রী মাঝে-মধ্যেই নবদ্বীপে ওষুধ আনতে যায়। বুধবার বিকেলেও গিয়েছিল। আমি বাড়িতে সন্তানকে নিয়ে ছিলাম। রাত সওয়া ১০টা নাগাদ ফোন করলে স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে, কোথায় পড়ে আছে, জানে না। চারদিকে অন্ধকার, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছি। হাত-পা ভেঙে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, ঘটনার কথা আত্মীয়-স্বজনকে জানিয়ে গভীর রাতে থানায় যান তাঁরা। পরে রাধিকার মোবাইলের অবস্থান দেখে জানা যায়, দাঁইহাটের কাছে বেড়ায় রয়েছেন তিনি। এ দিন সকালে গিয়ে দেখেন, মহিলা গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। একটি কানে সোনার গয়না থাকলেও অন্য কানে ছিল না। তাঁকে প্রথমে কাটোয়া হাসপাতাল, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ দিন রাধিকা বলেন, “আমি মহিলা কামরায় ছিলাম। অন্য যাত্রী ছিল না। নামব বলে এগিয়ে এসেছিলাম। ওই অপরিচিত ছেলেটি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই বলি, মেয়েদের কামরায়
কেন উঠেছেন। তখনই আমাকে টানাহেঁচড়া শুরু করে। একটি কানের গয়না খুলে দিই। তার পরেও আমাকে ঠেলে ফেলে দেয়। জ্ঞান হারাই। আর কিছু জানা নেই।”
ঘটনায় যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাওড়া-কাটোয়া সুবার্বান প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দেবাশিস বসু বলেন, ‘‘দিন যত যাচ্ছে ততই নিরাপত্তা কমছে। রেল শুধু ব্যবসার কথা ভাবে। যাত্রী নিরাপত্তা নেই বলেই এই ঘটনা ঘটেছে।’’ কাটোয়া রেল পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি কী করে ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy