পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাস করছেন তাঁরা। ভোটার পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড রয়েছে। রয়েছে বৈধ বিদ্যুত্ সংযোগ। পুরসভা জল সরবরাহ করে। রয়েছে সরকারি প্রাথমিক স্কুলও। কিন্তু দুর্গাপুরের ধোবীঘাট, রঘুনাথপুর, মধুপল্লি, কমলিয়াতলা, বিজুপাড়ার মতো এলাকাগুলি গড়ে উঠেছে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) জমিতে। আইনত যা বৈধ নয়। সম্প্রতি ডিএসপি কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে ওই জমি ‘লিজ’ দেওয়ার ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। ডিএসপি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, এ ভাবে লিজ দেওয়া সংস্থার নিয়মসিদ্ধ নয়।
ডিএসপি টাউনশিপের ঠিক পাশেই দুর্গাপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে এই সব এলাকা। সেখানকার বাসিন্দারা ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে পাঠানো চিঠিতে দাবি করেছেন, তাঁদের অন্যত্র থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। এলাকার অধিকাংশ মানুষই বিপিএল তালিকাভুক্ত। দিনমজুরি করে, রিকশা চালিয়ে, বাড়ি-বাড়ি সবজি বিক্রি করে বা ডিএসপি টাউনশিপে সংস্থার কর্মীদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার চলে। কখনও উচ্ছেদ করা হলে তাঁরা কার্যত নিরাশ্রয় হয়ে পড়বেন। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মাল, সুশীল মন্ডল, সুকুমার দাসেরা জানান, প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দা বছরের পর বছর ধরে এই এলাকায় আছেন। অনেকেই পাকা বাড়িঘর তৈরি করে নিয়েছেন। কিন্তু কখন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানান, তা ভেবে সব সময় বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকেন। তাঁদের কথা, “আমরা চাই, ডিএসপি কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে আমাদের জমি ‘লিজ’ দিন। তাহলে আমাদের আতঙ্ক দূর হয়। শান্তিতে বসবাস করতে পারি।” তাঁরা দাবি করেন, ডিএসপি কর্তৃপক্ষ সেপকো, নন-কোম্পানি, এ-জোন মেনটেন্যান্স ইত্যাদি এলাকায় বসবাসের জন্য জমি ‘লিজ’ দিয়েছেন। সে ভাবে তাঁদেরও ‘লিজ’ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হোক। শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, পুরসভার তরফে ওই এলাকায় জল সরবরাহ, উপযুক্ত নিকাশি-সহ নানা পরিষেবা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “পুরসভা তা দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু জমির বিষয়টি ডিএসপি-র হাতে।”
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থার জমিতে বাইরের কারও যে কোনও নির্মাণ অবৈধ। কারখানার কর্মীদের সমবায়কে শহরের কিছু কিছু জায়গায় নির্দিষ্ট সময়সীমার ভিত্তিতে চুক্তি মারফত জমি ‘লিজ’ দেওয়া হয়েছে। সেগুলিতে তাঁরা বাড়ি তৈরি করেছেন। তবে বাইরের কাউকে এ ভাবে ‘লিজ’ দেওয়ার কোনও উদাহরণ নেই। ডিএসপি-র এক আধিকারিক বলেন, “টাউনশিপ লাগোয়া এবং টাউনশিপের মাঝেও বেশ কিছু জায়গায় অনেকে জমি দখল করে বাড়িঘর, দোকান-বাজার গড়েছেন। সেগুলি সব বেআইনি। কর্তৃপক্ষ যে কোনও দিন উচ্ছেদ করতে পারেন। যত দিন তা না হয় তত দিন কোনও সমস্যা হবে না।” সংস্থার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো বলেন, “ধোবীঘাট বা লাগোয়া এলাকাগুলিতে অনেকেই বছরের পর বছর ধরে অবৈধ ভাবে ডিএসপি-র জমি দখল করে বাস করছেন। সংস্থার ওই জমি প্রয়োজন হলেই বাসিন্দাদের উঠে যেতে হবে। ‘লিজ’ দেওয়ার ব্যবস্থা করার আর্জি অর্থহীন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy