অজয়ের পাড়ে বেআইনি নির্মাণ।
কোথাও দখল হয়ে যাচ্ছে আইটিআই কলেজ তৈরির জায়গা, কোথাও বা নদীর তীরবর্তী সরকারি জমি। তবে নির্বাচন কমিশন আসতেই জবরদখল হয়ে থাকা সরকারি জমি ফাঁকা করতে উদ্যোগী হল কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে কাটোয়া ১ ব্লকের আইটিআই তৈরির জায়গায় গিয়ে অন্তত ২০টি বাড়ি ভেঙে দেয়। পরে সেখানে ‘আইটিআই কলেজ তৈরির জায়গা’ বলে বোর্ডও টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই লোকসভা ভোটের আগে কাটোয়ার দু’প্রান্তে ওই সরকারি জায়গা কারা জবরদখল করল তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া ১ ব্লকের গোয়াই পঞ্চায়েত এলাকার সুড্ডো গ্রামে ৫ একর খাস জমিতে আইটিআই কলেজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কলেজ তৈরির জন্য জমিও দিয়েছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। অভিযোগ, বেশ কয়েক মাস ধরে ওই জমির ধারে ধারে খুঁটি পুঁতে জায়গার দখল নিচ্ছিলেন বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দারা। এমনকী প্রশাসনের ‘নজরদারি’র অভাবে কেউ ছিটে বেড়ার বাড়ি, কেউ টিনের চাল দিয়ে মাটির বাড়িও বানিয়ে ফেলেছিলেন। অনেকে আবার অস্থায়ী বাড়ির কাঠামো তৈরি করে রেখে দিয়েছিলেন। গ্রামবাসীরা জানান, এ নিয়ে বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। অথচ কিছুই হয় নি। কাটোয়া ১ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “মাত্র ছ’মাস আগেও আমরা ওই জায়গা পরিদর্শন করে এসেছি। তখন কত গাছ ছিল। এখন গাছ কেটে বাড়ির কাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে।” তবে এ দিন অন্তত ২০টি বাড়ি ভেঙে দেয় প্রশাসন। কোনও বাধার মুখেও পড়তে হয়নি।
আইটিআই কলেজের জমিতে চলছে উচ্ছেদ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হরিপুর, ফুলবাগান, করুই থেকে অনেকেই এসে অস্থায়ী বাড়ি তৈরি করছেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীরা বাধা দিতে গেলে বারবার অশান্তিও হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা কর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দলগুলি পিছন থেকে মদত দেওয়ায় বহিরাগতরা এসে সরকারি জায়গার দখল নিচ্ছে। এসডিও (কাটোয়া) মৃদুল হালদার বলেন, “জবরদখলকারীরা বাড়ি তৈরি করলেও বসবাস শুরু করেনি। সরকারি জায়গায় থাকা ওই বাড়িগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।” তবে তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রামের অভিযোগ, সিপিএমের মদতে কিছু লোক ওই সরকারি জায়গা দখল করে বসেছিল। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কাটোয়া শহরে অজয়ের বাঁধের নীচেও (নদীর প্রান্তে) সরকারি জায়গা দখল করে পাকা বাড়ি তৈরি হচ্ছে বলে কিছু দিন আগে স্থানীয় বাসিন্দারা মহকুমাাসকের কাছে অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, অজয় থেকে ভাগীরথী পর্যন্ত বাঁধের ধার ও নদীর ধার দিয়ে গেলেই দেখা যাবে বহিরাগতরা সরকারি জায়গা দখল করে বসবাস করছে। তাঁদের অভিযোগ, এতে এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাটোয়া পুরসভার পক্ষ থেকেও এসডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়ে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়। সেচ দফতরের কর্তারা এলাকা ঘুরে এসডিওর কাছে মৌখিক রিপোর্টও করেন। কাটোয়া ১ ব্লক দফতর জানিয়েছে, ১৯৭৮ সালের বন্যার পরে অজয় নদের উপর বাঁধ তৈরির সময় ওই সব জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এলাকার বাসিন্দারা আরও জানান, কাটোয়া শহরের ভিতর অজয় নদের ধারের ওই জায়গা এলাকার ‘পিকনিক স্পট’। তা দখল হয়ে গেলে সমস্যা হবে। এসডিও বলেন, “আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। সেচ দফতর, বিএলএলআরও দফতরের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তৃণমূলের মদতে বহিরাগতেরা সরকারি জায়গা দখল করে পাকা বাড়ি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে অমর রামের দাবি, প্রশাসনের ঢিলেমিতেই সরকারি জায়গায় ওভাবে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy