মন্তেশ্বরে খুনের ঘটনায় শোকে বিহ্বল পরিবার। —নিজস্ব চিত্র
বাজার থেকে জিনিস কিনে ট্রেকারে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন দু’ভাই। ট্রেকার থেকে নামতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হল তাঁদের। বর্ধমানের মন্তেশ্বরের তেঁতুলিয়া গ্রামের রাস্তায় বৃহস্পতিবার সকালে পড়ল রক্তের গাঢ় পোঁচ। ফুট পনেরোর ব্যবধানে দেহ মিলল কাশেম শেখ (৬৫) ও তাঁর ভাই গোপাল শেখের (৬০)। ওই জোড়া খুনের বদলায় বোমার ঘায়ে প্রাণ গেল আর এক জনের। রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে মাঠ থেকে মেলা ক্ষতবিক্ষত দেহটি ফটিক শেখের (৫০)। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকার দখল নিয়ে কাশেম বনাম ফটিক গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের বিবাদ ছিল। ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “কাশেম এবং ফটিকের নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দু’পক্ষের গোলমালের জেরেই এ দিনের ঘটনা।” যদিও কাশেম এবং গোপালকে দলীয় কর্মীকে দাবি করে তৃণমূলের মন্তেশ্বর ব্লক সভাপতি সজল পাঁজার অভিযোগ, “এলাকায় সন্ত্রাস করতে সিপিএম তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতী ফটিককে দিয়ে ওই দুই ভাইকে খুন করিয়েছে।” তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মন্তেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ হেদায়তুল্লাহর দাবি, ঘটনাটি পুরোপুরি অরাজনৈতিক।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কাশেম শেখ ও ফটিক শেখের গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই বোমাবাজি হতো। মাস পাঁচেক আগে জমি থেকে ধান কাটা নিয়ে বড় সংঘর্ষ বাধে। তখন কাশেম শেখের বাড়ি-সহ আরও ৩০টি বাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ ওঠে ফটিকের দলের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি পঞ্চায়েতের রাস্তা তৈরির টেন্ডার পাওয়া নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিবাদ চরমে ওঠে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ গ্রামে ঢোকার মুখে বামুনপাড়া মোড়ে কাশেমদের জন্য অপেক্ষা করছিল ফটিকের দলবল। দু’ভাই ট্রেকার থেকে নামতেই হামলা হয়। ঘটনাস্থলেই তাঁরা মারা যান। বোমাবাজি করে আততায়ীরা চলে যায়। কিন্তু হামলার খবর পেয়ে পাল্টা বোমাবাজি শুরু করে কাশেমের পক্ষ। কাশেমের ঘনিষ্ঠেরা ফটিককে তাড়া করে বোমা মেরে খুন করে বলে অভিযোগ। ব্যাপক বোমাবাজি শুরু হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরদোর, দোকানপাট বন্ধ করে বসেছিলেন। পুলিশও দীর্ঘক্ষণ গ্রামে ঢুকতে পারেনি। পরে বড় বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনটি দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। ফটিকের এক সঙ্গীও বোমার ঘায়ে জখম হয়েছে বলে খবর রয়েছে পুলিশের কাছে।
কাশেম শেখের ছেলে আমজাদ শেখ গ্রামেরই ২০ জনের নামে তাঁর বাবা ও কাকাকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেও তেঁতুলিয়া গ্রামে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy