কৈচরের কর্মিসভায় পাশাপাশি অনুব্রত মণ্ডল ও অনুপম হাজরা।—নিজস্ব চিত্র।
দু’দিন আগেই বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রার্থীকে ‘নিজের লোক’ বলে জাহির করেছিলেন। প্রার্থীও ‘কেষ্ট কাকা’ সম্বোধন করে তাঁর থেকে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন। রবিবার ফের বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মঙ্গলকোট বিধানসভার কৈচরে দলীয় কর্মিসভাতেও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। এ দিনও দু’জনেই দু’জনের ‘কাছের লোক’ প্রমাণে মরিয়া হলেন।
বুধবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে তৃণমূলের একটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়, ওই কেন্দ্রে অনুব্রত আদতে তাঁর ঘনিষ্ঠ তথা বোলপুরের উপ-পুরপ্রধান নরেশ বাউড়িকে টিকিট দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, প্রকাশিত প্রার্থী তালিকায় নরেশবাবুর নাম ছিল না। বদলে প্রার্থী করা হয় শান্তিনিকেতনেরই ছেলে, বিশ্বভারতীর সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক অনুপম হাজরাকে। তৃণমূলের ওই সূত্রের দাবি, ‘বিশেষ আস্থাভাজন’ হলেও দল অনুব্রতর সব ‘ইচ্ছা’কে সায় দিতে নারাজ। তাই অনুব্রতর পছন্দের প্রার্থীকে টিকিট দেননি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই দু’জনেই পরস্পরের ‘কাছের লোক’ বলে প্রমাণ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। দলেরই একটি সূত্রের দাবি, এ ভাবে বারবার এমন আচরণ করে অনুব্রত আসলে দলের নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করে চলেছেন। অন্য দিকে, জেতার জন্য অনুব্রতর হাত ধরা ছাড়া নতুন প্রার্থীর কাছে অন্য কোনও বিকল্পও নেই।
বোলপুর লোকসভার মধ্যে বর্ধমানের মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম বিধানসভা রয়েছে। কেতুগ্রাম ছাড়া বাকি দু’টিই সিপিএমের দখলে। মঙ্গলকোট মাত্র ১২৮ ভোটে তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছিল। এ দিন সে কথা উল্লেখ করে অনুব্রত কর্মীদের পরামর্শ দেন, “তৃণমূল প্রার্থীকে বিধানসভায় জেতাতে পারেননি বলে আপনাদের মনে অনেক দুঃখ রয়েছে। এ বার আমাদের প্রার্থীকে রেকর্ড ভোটে জিতিয়ে সেই দুঃখ ভুলে যান।” ওই কথার রেশ ধরেই ‘ভাইপো’ অনুপমও দলীয় সমর্থকদের কাছে আব্দার করেন, “কেষ্ট কাকুর কথা মতো আমাকে রেকর্ড ভোটে জেতার জন্য আব্দার করছি। দিদি-কাকু আমাকে বাচ্চা ছেলে বলেন। বাচ্চা ছেলেরা তো একটু-আধটু আবদার করবেই!” সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রত বর্তমান সাংসদের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, “এখানকার বামপন্থী সাংসদ কোনও উন্নয়নই করেননি। সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করতে পারেননি। তাই সিপিএমকে ঝাঁটা দিয়ে তাড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের হাত ধরুন।”
অনুব্রতর সে কথার জবাব দিয়ে সিপিএমের বর্ধমান জেলার সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “এমনিতেই অনুব্রতর মতো মানুষের কুত্সিত কথার জবাব দিতেও ঘেন্না হয়। আমাদের সাংসদ তহবিলের টাকায় ঠিক ভাবেই এলাকার উন্নয়ন করেছেন। শুধু গত দু’বছর তৃণমূল সরকারের অসহযোগিতায় উন্নয়নের কাজে সমস্যা হয়েছে।”
বস্তুত জেলার অন্য জায়গাতেও কর্মিসভা শুরু করেছে তৃণমূল। দলীয় প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রণকৌশলও বাতলে দিচ্ছেন নেতারা। শনিবার পূর্বস্থলী ১, ২ ও কালনা ১ ব্লকে তিনটি বৈঠক হয়। বিকেলের বৈঠকটি হয় ধাত্রীগ্রাম কার্যালয়ে। দলীয় প্রার্থী সুনীল মণ্ডল ছাড়াও তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ, কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুণ্ডু-সহ বেশ কিছু নেতা কর্মীরা সেখানে হাজির ছিলেন। স্বপনবাবু জানান, পরিসংখ্যান দিয়ে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পে কত মানুষ উপকৃত হয়েছেন তা বুথে বুথে প্রচার করতে হবে। এছাড়া নিজেদের খেয়ালখুশি মতো মিটিং ডাকার ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয় কর্মীদের। স্বপনবাবু বলেন, অন্য দলের নেতারা এলাকায় মিটিং করার পরেই আমাদের দলের লোকজন অধীর হয়ে পড়েন। এ বার সব পরিকল্পনামাফিক হবে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বৈঠক করতে গেলে প্রার্থী ও দলের জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”
গ্রামের বারোয়ারিতলা, ঠাকুরদালানের মতো ছোট ছোট জায়গায় বৈঠক করার উপরেও জোর দেওয়া হয়। কারণ বড় বড় বৈঠকে মেয়ে-বউরা না গেলেও বাড়ির পাশের বৈঠকে হাজির হন। এছাড়া দলবিরোধী কাজ করলে শাস্তি পেতে হবে বলেও জানান স্বপনবাবু। ভোট পর্যন্ত পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সদস্যদের খুব প্রয়োজন না হলে দফতরে না থাকার পরামর্শ দেন তিনি। বরং এলাকায় মাটি কামড়ে থাকার কথা বলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy