Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

লঙ্কা গুঁড়ো ছুড়ে পালানোর চেষ্টা, পাকড়াও বন্দি

হাসপাতাল চত্বরে দৌড়চ্ছিল রোগা-পাতলা এক বছর পঞ্চাশের ব্যক্তি। পিছনে দুই পুলিশকর্মী। তাঁদের মুখে, উর্দিতে ছড়িয়ে লঙ্কা গুঁড়ো। তাড়া খেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়তেই ওই ব্যক্তির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পুলিশকর্মীরা। ঘটনা দেখে হতভম্ব আশপাশের লোকজন কিছু বোঝার আগেই ওই ব্যক্তিকে চ্যাংদোলা করে তুলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেল পুলিশের ভ্যান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৭:২৫
Share: Save:

হাসপাতাল চত্বরে দৌড়চ্ছিল রোগা-পাতলা এক বছর পঞ্চাশের ব্যক্তি। পিছনে দুই পুলিশকর্মী। তাঁদের মুখে, উর্দিতে ছড়িয়ে লঙ্কা গুঁড়ো। তাড়া খেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়তেই ওই ব্যক্তির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পুলিশকর্মীরা। ঘটনা দেখে হতভম্ব আশপাশের লোকজন কিছু বোঝার আগেই ওই ব্যক্তিকে চ্যাংদোলা করে তুলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেল পুলিশের ভ্যান।

শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের সামনে রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা বুঝতে পারেননি, পুলিশের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল বছর পঞ্চাশের ওই বন্দি। পকেট থেকে লঙ্কা গুঁড়ো পুলিশের দিকে ছুঁড়েও শেষরক্ষা করতে পারেনি সে। দশরথ মাহাতো নামে চুরি, ছিনতাই, লুঠপাটে অভিযুক্ত এই আসামীকে পাকড়াও করে ফেলেন দুই কনস্টেবল। কিন্তু বন্দির পকেটে লঙ্কা গুঁড়ো কোথা থেকে এল, তার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস।

আসানসোল সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, নানা অপরাধে অভিযুক্ত দশরথ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সে এখানে রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে একটি লগ্নি সংস্থায় ডাকাতির ঘটনা, কুলটির নিয়ামতপুরে চুরিতে সে জড়িত। ঝাড়খণ্ডের একাধিক থানায় নানা ঘটনায় সে অভিযুক্ত। বেশ কিছু দিন ধানবাদ জেলেও ছিল সে।

আসানসোলের জেল সুপার সৌমিক সরকার জানান, এ দিন সকালে দশরথ জানায়, তা পেটে ব্যথা হচ্ছে। দুপুরে জেলের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে পুলিশি পাহারায় আসানসোল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বহির্বিভাগে তার চিকিৎসা হয়। ঘণ্টা দুই পরে তাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে জেলের দিকে রওনা হন আসানসোল দক্ষিন থানার এএসআই শৈলেন দাস এবং দুই কনস্টেবল। তাঁরা জানান, হাসপাতাল চত্বরে একেবারে শেষ প্রান্তে মর্গের কাছে গড়িটি আসতেই দশরথ তাঁদের জানায়, সে প্রস্রাব করবে। গাড়ি থামিয়ে তাকে নামানো হয়। দশরথ সামনে ঝোপ-জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুটা পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই পুলিশকর্মী। তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, ওই বন্দি অন্য মতলব এঁটেছে।

ওই পুলিশকর্মীরা জানান, হঠাৎই পকেট থেকে মুঠো পাকিয়ে কিছু একটা বের করে দশরথ। তাঁদের দিকে তা ছুঁড়ে দেয় সে। তার পরেই পিছন ফিরে দৌড়। আচমকা এই ঘটনায় কিছুটা হকচকিয়ে যান দুই পুলিশকর্মী। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারেন, তাঁদের দিকে লঙ্কা গুঁড়ো ছুড়ে পালানোর চেষ্টা করছে ওই বন্দি। তবে তা দিয়ে সে কাত করতে পারেনি ওই পুলিশকর্মীদের। এখটু ধাতস্থ হয়েই দশরথের পিছনে দৌড়ন তাঁরা। তা দেখে পড়িমরি ছুটতে গিয়ে পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় দশরথ। তার পরে ফের গন্তব্য পুলিশভ্যান।

কিন্তু, জেলে থাকা এক আসামীর পকেটে লঙ্ক গুঁড়ো এল কী ভাবে? তাকে জেলের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে ভাল ভাবে পরীক্ষাই বা করা হয়নি কেন? জেল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতির কথা অবশ্য মানতে চাননি জেল সুপার সৌমিকবাবু। তাঁর দাবি, “জেল থেকে বের করার সময়ে ওই আসামিকে ভাল ভাবেই পরীক্ষা করা হয়েছিল। তখন তার কাছে কিছু ছিল না। চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পথে কোনও ভাবে তার কাছে এই সব এসেছে।” আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “কী ভাবে ওই আসামির কাছে লঙ্কা গুঁড়ো এল, তার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। জেল সুপারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

দশরথ জেলে ঢুকে যাওয়ার পরে অবশ্য হাঁফ ছেড়েছেন দুই পুলিশকর্মী। তাঁরা বলছেন, “ওই লঙ্কা গুঁড়োর ঝাঁঝটা সে রকম ছিল না, এটাই বাঁচোয়া!”

অন্য বিষয়গুলি:

escape asansole
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE